পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২০৬

রূপ তৃণ জ্ঞান করিতে পারি। কাসেম যদি বিপক্ষ-ভয়ে ভয়ার্ত্ত হয়, হাসানের নাম ডুবিবে, আপনারও নাম ডুবিবে। অনুমতি করুন, একা আমি সশস্ত্র হইয়া সহস্র সহস্র লক্ষ্য লক্ষ্য রিপুবিনাশে সমর্থ।”

 হোসেন বলিলেন, “প্রাণাধিক! আমার বংশে তুমি সকলের প্রধান, তুমি এমাম বংশের বহুমুল্য রত্ন, তুমি পিতার জ্যেষ্ঠপুত্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র, তুমি সৈয়দ বংশের অমূল্য নিধি। তুমি তোমার মার একমাত্র সন্তান, তাঁহার সম্মুখে থাকিয়া তাঁহাকে এবং সমুদয় পরিজনকে সান্ত্বনা দান কর। আমি নিজেই যুদ্ধ করিয়া ফোরাতকূল উদ্ধার করিতেছি।”

 কাসেম বলিলেন, “আপনি যাহাই বলুন, কাসেমের প্রাণ দেহে থাকিতে আপনাকে অস্ত্র ধারণ করিতে হইবে না। যদি ফোরাতকূল উদ্ধার করিতে পারি, তবে ফোরাত নদী আজ লোহিত বর্ণে রঞ্জিত হইয়া এজিদের সৈন্য-শোণিতে যোগ দিয়া মহাসমুদ্রে প্রবাহিত হইবে।”

 হোসেন বলিলেন “বৎস! আমার মুখে এ কথার উত্তর নাই। তোমার মাতার আদেশ লইয়া যাহা ইচ্ছা তাহাই কর।”

 হাসনেবানুর পদধূলি গ্রহণ করিয়া মহাবীর কাসেম যুদ্ধযাত্রা প্রার্থনা করিলে, হাসনেবানু কাসেমের মস্তক চুম্বন করিয়া আশীর্ব্বচন প্রয়োগ-পূর্ব্বক বলিলেন, “যাও বাছা, যুদ্ধে যাও। তোমার পিতৃঋণ পরিশোধ কর। পিতৃশত্রু এজিদের সৈন্যগণের মস্তক চূর্ণ কর, যুদ্ধে জয়ী হইয়া ফোরাতকূল উদ্ধার কর। তোমার আর আর ভ্রাতা-ভগ্নিগণ তোমারই মুখাপেক্ষা করিয়া রহিল। যাও বাপ! তোমায় আজ ঈশ্বরের পদতলে সমর্পণ করিলাম।”

 হাসনেবানুর নিকট হইতে বিদায় লইয়া পিতৃব্যের পদচুম্বনপূর্ব্বক কাসেম অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিবেন, এমন সময় হোসেন বলিলেন, “কাসেম। একটু বিলম্ব কর।” অনুজ্ঞা শ্রবণ মাত্র কাসেম তৎক্ষণাৎ অশ্ববল্গা ছাড়িয়া পিতৃব্য সম্মুখে দণ্ডায়মান হইলেন।

 হোসেন বলিতে ডাকিলেন, “কাসেম! তোমার পিতার নিকট আমি এক প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ আছি, আমাকে সেই প্রতিজ্ঞা হইতে উদ্ধার