পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২১২

বায়ুবেগে দৌড়াইয়া চলিল—সখিনা চমকিয়া উঠিলেন, তাঁহার হৃদয়ে বেদনা লাগিল।

 কাসেম সমরক্ষেত্রে যাইয়া বলিতে লাগিলেন, “যুদ্ধ-সাধ যদি কাহারও থাকে, যৌবনে যদি কাহারও অমূল্য জীবন বিড়ম্বনা জ্ঞান হইয়া থাকে, তবে কাসেমের সম্মুখে অগ্রসর হও।”

 সেনাপতি ওমর পূর্ব্ব হইতেই কাসেমকে বিশেষরূপে জানিতেন। কাসেমের তরবারি-সম্মুখে দাঁড়াইতে পারে, এমন বলবান্ বীর তাঁহার সে মধ্যে এক বর্জ্জক ভিন্ন আর কেহই ছিল না। বর্জ্জককে সম্বোধন করিয়া তিনি বলিলেন, “ভাই বর্জ্জক! হাসান-পুত্র কাসেমের সহিত যুদ্ধ করিতে আমাদের সৈন্যদল মধ্যে তুমি ভিন্ন আর কেহই নাই। ভাই, কাসেমের বলবীর্য্য, কাসেমের বলবিক্রম, কাসেমের বীরত্ব-প্রতাপ সকলই আমার জানা আছে। তাহার সম্মুখে যাহাকে পাঠাইব, সে আর শিবিরে ফিরিয়া আসিবে না। আমি নিশ্চয়ই বলিতে পারি, কোন ক্রমেই কাসেমের হস্ত হইতে সে আর রক্ষা পাইবে না। নিরর্থক সৈন্যক্ষয় করা যুক্তিসিদ্ধ নহে। আমার বিবেচনায় তুমিই কাসেম অপেক্ষা মহাবীর। তুমিই কাসেমের জীবন-প্রদীপ নির্ব্বাণ করিয়া আইস।”

 বর্জ্জক বলিলেন, “বড় ঘৃণার কথা! শামদেশে মহা মহা বীরের সম্মুখে আমি দাঁড়াইয়াছি, মিশরে প্রধান প্রধান মহারথীরা বর্জ্জকের বীরত্ব, বীর্য্য অবগত আছে, আজ পর্য্যন্ত কেহই সম্মুখযুদ্ধে অগ্রসর হইতে সাহস করে নাই; এখন কি না, এই সামান্য বালকের সহিত ওমর আমাকে যুদ্ধ করিতে আদেশ করেন, বড়ই ঘৃণার কথা! হোসেনের সম্মুখে সমরক্ষেত্রে দণ্ডায়মান হইলে বরং কথঞ্চিৎ শোভা পায়; আর এ কি না কাসেমের সহিত যুদ্ধ! বালকের সহিত সংগ্রাম! কনখও না! কখনও না! কখনও আমি কাসেমের সহিত যুদ্ধ করিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা দিব না।”

 ওমর বলিলেন, “তুমি কাসেমকে জান না। তাহাকে অবহেলা করিও না। তাহার তুল্য মহাবীর মদিনায় আর নাই। ভাই বর্জ্জক, তুমি ভিন্ন