পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৩
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

কাসেমের অস্ত্রাঘাত সহ্য করে এমন বীর আমাদের দলে আর কে আছে?”

 হাসিতে হাসিতে বর্জ্জক বলিলেন, “কাহাকে তুমি কি কথা বল? ক্ষুদ্র কীট, ক্ষুদ্র পতঙ্গ কাসেম, তাহার মাথা কাটিয়া আমি কি বিশ্ববিজয়ী বীরহস্ত কলঙ্কিত করিব? কখনই না—কখনই না! সিংহের সহিত সিংহের যুদ্ধ হয়, শৃগালের সহিত সিংহ কোন কালে যুদ্ধ করে, ওমর? সিংহ—শৃগাল! তুলনা করিলে তাহাও নহে। বর্জ্জক সিংহ, কাসেম একটা পতঙ্গ মাত্র। কি বিবেচনায় ওমর! কি বিবেচনায় তুমি সেই তুচ্ছ পতঙ্গ কাসেমের সঙ্গে আমাকে যুদ্ধ করিতে পাঠাও? আচ্ছা, তোমার যদি বিশ্বাস হইয়া থাকে—কাসেম মহাবীর, তবে আমি যাইব না, আমার অমিততেজা চারি পুত্র বর্ত্তমান, তাহারা রণক্ষেত্রে গমন করুক—এখনই তাহারা কাসেমের মাথা কাটিয়া আনিবে।”

 তাহাই ওমরের তথাস্তু। আদেশমত বর্জ্জকের প্রথম পুত্র যুদ্ধে গমন করিলেন। সে যুদ্ধক্ষেত্রে বর্ষা চালাইতে আরম্ভ করিল। বিপক্ষ পরাস্ত হইল না। অবশেষে অসিযুদ্ধ। সম্মুখে কাসেম! উভয়ে মুখোমুখী হইয়া দণ্ডায়মান আছেন। বর্জ্জকের পুত্র অস্ত্র প্রয়োগ করিতেছেন, কাসেম হাস্য করিতেছেন। বর্জ্জকের পুত্রের তরবারি-সংযুক্ত বহুমূল্য মণিমুক্তা দেখিয়া সহাস্য আস্য়ে কাসেম কহিলেন, “কি চমৎকার শোভা! মণিময় অস্ত্র প্রদর্শন করিলেই যদি মহারথী হয়, তবে বল দেখি, মস্তকে মণি শোভিত কালসর্প কেন মহারথী হইবে না?”

 কথা না শুনিয়াই বর্জ্জকের পুত্র কাসেমের মস্তক লক্ষ্য করিয়া অস্ত্র নিক্ষেপ করিলেন।

 অস্ত্র ব্যর্থ হইয়া গেল। পুনর্ব্বার আঘাত। কাসেমের বর্শা বিদ্ধ হইয়া বাম হস্ত হইতে শোণিতের ধারা ছুটিল। ত্রস্তহস্তে শিরস্ত্রাণ ছিন্ন করিয়া ক্ষত স্থান বন্ধনপূর্ব্বক ক্ষতযোদ্ধা পুনর্ব্বার অস্ত্রধারণ করিলেন। বর্জ্জকের পুত্র বর্শা ধারণ করিয়া বলিলেন, “কাসেম! তলোয়ার রাখ। তোমার বাম হস্তে আঘাত লাগিয়াছে। বর্ম্মধারণে তুমি অক্ষম। অসিযুদ্ধে তুমি এখন অক্ষম। বর্শা ধারণ কর, বর্শাযুদ্ধই শ্রেয়ঃ।”