পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধ
২১৮

শোণিতবিন্দু সখিনা সমুদয় অঙ্গে মাখিতে লাগিলেন; মাখিতে মাখিতে কহিতে লাগিলেন, “বিবাহ-সময়ে এই হস্তদ্বয় মেহেদী দ্বারা সুরঞ্জিত হয় নাই—একবার চাহিয়া দেখ!—কাসেম! একবার চাহিয়া দেখ! তোমার সখিনার হস্ত তোমারি রক্ত-ধারে কেমন শোভিত হইয়াছে। জীবিতেশ্বর। তোমারি এই পবিত্র রক্ত মাখিয়া সখিনা চিরজীবন এই বেশেই থাকিবে। যুদ্ধজয়ী হইয়া আজ বাসর-শয্যায় শয়ন করিবে বলিয়াছিলে, সে সময় ত প্রায় আগত;—তবে ধূলিশয্যায় শয়ন কেন হৃদয়েশ?—বিধাতা! আজই সংসার-ধর্ম্মের মুখ দেখাইলে, আজই সংসারী করিলে, আবার আজই সমস্ত সুখ মিটাইলে —দিন এখনও রহিয়াছে; সে দিন অবসান না হইতেই সখিনার এই দশা করিলে! যে সূর্য্য সখিনার বিবাহ দেখিল, সেই সূর্য্যই সখিনার বৈধব্য-দশা দেখিয়া চলিল! সূর্য্যদেব! যাও, সখিনার দুর্দ্দশা দেখিয়া যাও। সৃষ্টিকাল হইতে আজ পর্য্যন্ত প্রতিদিন তুমি কত ঘটনা, কত কার্য্য, কত সুখ, কত দুঃখ দেখিয়াছ, কিন্তু দিবাকর! এমন ‘হরিষে বিষাদ’ কখনও কি দর্শন করিয়াছ?—সখিনার তুল্য দুঃখিনী কখনও কি তোমার চক্ষে পড়িয়াছে? যাও সূর্য্যদেব! সখিনার সদ্যবৈধব্য দেখিয়া যাও!”

 সখিনা এইরূপ নানা প্রকার বিলাপ করিতে করিতে অস্থির হইয়া পড়িলেন। কাসেমের অবস্থা দর্শনে হোসেন একেবারে অচৈতন্য হইয়া পড়িয়াছিলেন; কিঞ্চিৎ পরে সংজ্ঞা পাইয়া বলিতে লাগিলেন, “কাসেম! তুমি আমার কুল-প্রদীপ, তুমি আমার বংশের উজ্জ্বল মণি, তুমিই আমার মদিনার ভাবী রাজা,—আমার অবর্ত্তমানে তোমার শিরেই রাজমুকুট শোভা পাইত। বৎস! তোমার বীরত্বে—তোমার অস্ত্র-প্রভাবে মদিনাবাসীরা সকলেই বিমুগ্ধ! আরবের মহা মহা যোদ্ধাগণ তোমার নিকট পরাস্ত; তুমি আজ কাহার ভয়ে রণক্ষেত্র হইতে ফিরিয়া আসিয়া লোহিত বসনে নিস্পন্দভাবে ধরাশায়ী হইয়া রহিলে? প্রাণাধিক!— বীরেন্দ্র! ঐ শুন, শত্রুদল রণবাদ্য বাজাইতেছে। তুমি সমরাঙ্গণ হইতে ফিরিয়া আসিয়াছ বলিয়া তোমাকে তাহারা ধিক্কার দিতেছে। কাসেম! গাত্রোত্থান কর,—তরবারি ধারণ কর। ঐ