পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৯
মহরম পর্ব্ব—পঞ্চবিংশ প্রবাহ

দেখ, তোমার প্রিয় অশ্ব ক্ষতবিক্ষত শরীরে শোণিতাক্ত কলেবরে তোমাকে ধরাশায়ী দেখিয়া অবিশ্রান্ত অশ্রুবর্ষণ করিতেছে! শরাঘাতে তাহার শ্বেতকান্তি পরিবর্ত্তিত হইয়া শোণিতধারায় লোহিতবর্ণ ধারণ করিয়াছে; তথাপি রণক্ষেত্রে যাইবার জন্য উৎসাহের সহিত তোমারই দিকে চাহিয়া রহিয়াছে, সম্মুখস্থ পদ দ্বারা মৃত্তিকা উৎক্ষিপ্ত করিতেছে। কাসেম! একবার চক্ষু মেলিয়া দেখ, তোমার প্রিয়তম অশ্বের অবস্থা একবার চাহিয়া দেখ! কাসেম! আজ আমি তোমার বিবাহ দিয়াছি। যাহার সঙ্গে কোন দিন কোন সম্বন্ধ ছিল না, পরিচয় ছিল না, প্রণয় ছিল না, এমন কোন কন্যা আনিয়া তোমাকে সমর্পণ করি নাই; আমার হৃদয়ের ধনকেই তোমার হস্তে দিয়াছি। তোমারই পিতৃ-আদেশে সখিনাকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিয়াছি।”

 হাসানকে উদ্দেশ করিয়া হোসেন অতি কাতরস্বরে বলিতে লাগিলেন, “ভ্রাতঃ। জগৎ পরিত্যাগের দিন ভাল উপদেশ দিয়া গিয়াছিলে। যে দিন বিবাহ, সেই দিনই সর্ব্বনাশ! যদি ইহাই জানিয়াছিলে, যদি সখিনার অদৃষ্টলিপির মর্ম্ম বুঝিতে পারিয়াছিলে, তবে কাসেমের সঙ্গে সখিনার বিবাহের উপদেশ কেন দিয়াছিলে, ভাই!—তুমি ত স্বর্গসুখে রহিয়াছ, এ সর্ব্বনাশ একবার চক্ষেও দেখিলে না—এই অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে বলিয়াই অগ্রে চলিয়া গেলে। ভাই! মৃতুসময় তোমার যত্নের রত্ন হৃদয়ের অমুল্য মণি কাসেমকে আমার হাতে দিয়া গিয়াছিলে; আমি এমনই হতভাগ্য যে, সেই অমূল্য নিধিটি রক্ষা করিতে পারিলাম না। আর কি বলিব? তোমার প্রাণাধিক পুত্র কাসেম এক বিন্দু জলের প্রত্যাশায় শত্রুহস্তে প্রাণ হারাইল! কাসেম বিন্দুমাত্র জল পাইলে এজিদের সৈন্যের নাম মাত্র অবশিষ্ট থাকিত না; তাহাদের দেহ-সমষ্টি শোণিত প্রবাহের সহিত ফোরাত-প্রবাহে ভাসিয়া কোথায় চলিয়া যাইত তাহার সন্ধানও রহিত না! আর সহ্য হয় না! সখিনার মুখের দিকে আর চাহিতে পারি না। কৈ আমার অস্ত্র শস্ত্র কোথায়? কাসেমের শোকাগ্নি আজ শত্রুশোণিতে পরিণত হউক। সখিনার বৈধব্যসূচক চিরশুভ্রবসন শোণিতে রঞ্জিত করিয়া চিরকাল সধবার চিহ্নে রাখিব; কৈ আমার বর্ম্ম কোথায়? কৈ