পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহরম পর্ব্ব—প্রথম প্রবাহ

আনন্দ জন্মে, সন্তান কামনায় লোকে তাহা সকলই করিয়া থাকে। আপনি ঈশ্বরের নিকট কামনা করিয়া পুত্রধন লাভ করেন নাই। আমিও পুত্রলাভের জন্য এই বৃদ্ধ বয়সে বক্ষ বিদীর্ণ করিয়া এই শোণিতবিন্দু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করি নাই। দয়াময় ভগবানের প্রসাদে অযাচিত এবং বিনাযত্নে আমরা উভয়ে এই পুত্ররত্ন লাভ করিয়াছি। অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করিয়া ক্রোধ প্রকাশ করিতে হয়। যে এজিদের মুখ এক মুহূর্ত্ত না দেখিলে একেবারে জ্ঞানশূন্য হন, যে এজিদকে সর্ব্বদা নিকটে রাখিয়াও আপনার দেখিবার সাধ মিটে না, অন্তর দিয়া আপনি কি তাহার অমঙ্গল কামনা করিতে পারেন? আমি ত সকলই জানি; কোন সময়ে এই এজিদকে প্রাণে মারিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন, তাহা পারিলেন কৈ? ঐ মুখ দেখিয়াই ত হাতের অস্ত্র হাতেই রহিয়া গেল! অস্ত্রাঘাতে পুত্রের প্রাণবধ সঙ্কল্প সাধন দূরে থাকুক, ক্রোড়ে লইয়া শত শত বার মুখচুম্বন করিয়াও মনের সাধ মিটাইতে পারেন নাই।”

 মাবিয়া বলিলেন, “আমাকে তুমি কি করিতে বল?”

 মহিষী বলিলেন, “আর কি করিতে বলিব? যাহাতে ধর্ম্ম রক্ষা পায়, লোকের নিকটে নিন্দনীয় না হইতে হয়, অথচ এজিদের প্রাণরক্ষা হয়, এমন কোন উপায় অবলম্বন করাই উচিত।”

 “উচিত বটে, কিন্তু উপায় আসিতেছে না। মূল কথা, যাহাতে ধর্ম্ম রক্ষা পায়, ধর্ম্মোপদেষ্টার আজ্ঞা লঙ্ঘন না হয়, অথচ প্রাণাধিক পুত্রের প্রাণরক্ষা হয়, ইহা হইলেই যথেষ্ট হইল। লোকনিন্দার ভয় কি? যে মুখে লোকে একবার নিন্দা করে, সে মুখে সুখ্যাতির গুণগান করাইতে কতক্ষণ লাগে?”

 মহিষী বলিলেন, “আপনাকে কিছুই করিতে হইবে না, কিছু বলিতেও হইবে না; কিন্তু কোন কার্য্যে বাধা দিতেও পারিবেন না। মারওয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করিয়াই আমি সকল কার্য্য করিব। যেখানে ধর্ম্মবিরূদ্ধ, ধর্ম্মের অবমাননা, কি ধর্ম্মোপদেষ্টার আজ্ঞালঙ্ঘনের অণুমাত্র সম্ভাবনা দেখিতে পান, বাধা দিবেন, আমরা ক্ষান্ত হইব।”

 মহারাজ মহাসন্তোষে হস্ত চুম্বন করিয়া বলিলেন, “তাহা যদি পার, তবে ইহা অপেক্ষা সন্তোষের বিষয় আর কি আছে? এজিদের অবস্থা দেখিয়া