পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২২৬

করিব। জগৎ দেখিবে, বৃক্ষপত্র দেখিবে, আকাশ দেখিবে, আকাশের চন্দ্র-সূর্য্য দেখিবে,—হোসেনের ধৈর্য্য, শান্তি, বীর্য্য ও প্রতাপ কত দূর।—আজ এই সূর্য্যকেই আদি, মধ্য, শেষ,—তাহার পরেও যদি কিছু থাকে, তাহাও দেখাইব। তোমরা আমার অন্য কেহ কাঁদিও না। যদি এই যাত্রাই এ জীবনের শেষ যাত্রা হয়, বার বার বলিতেছি, আর যুদ্ধ করিও না; আর কোন প্রাণীকেও যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠাইও না; জয়নাবকে মুহূর্ত্তের জন্য হাতছাড়া করিও না। আমি তোমাদিগকে সেই দয়াময় বিপত্তারণ জগৎকারণ জগদীশ্বরের চরণে সমর্পণ করিলাম,তিনি সকলকেই রক্ষা করিবেন। আমি প্রার্থনা করিতেছি, তোমরাও কায়মনে সেই জগৎপিতার সমীপে প্রার্থনা কর, শত্রু বিনাশ করিয়া তোমাদিগকে যেন উদ্ধার করিতে পারি।”

 পৌরজনমাত্রেই দুই হাত তুলিয়া ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতে লাগিলেন: “হে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডেশ্বর! আমাদিগকে আজ এই ঘোর বিপদ হইতে উদ্ধার কর! হে পরম কারুণিক পরমেশ্বর! আমাদিগকে দুরন্ত এজিদের দৌরাত্ম হইতে রক্ষা কর। হোসেন বলিতে লাগিলেন, “যদি তোমাদের সঙ্গে আমার এই দেখাই শেষ দেখা হয়, তবে তোমরা কেহই আমার জন্য দুঃখ করিও না—ঈশ্বরের নিন্দা করিও না। আমার মরণে তোমাদেরই মঙ্গল। আমি মরিলে অবশ্যই তোমরা সুখী হইবে, আমিই তোমাদের কষ্টের এবং দুঃখের কারণ ছিলাম।”

 পরিজনকে এই পর্য্যন্ত বলিয়া জয়নালকে ক্রোড়ে লইয়া হোসেন তাঁহাকে বলিতে লাগিলেন: “আমি বিদায় লইলাম, আমার জন্য কাঁদিও না। কেয়ামতে আমার সঙ্গে অবশ্যই দেখা হইবে। তুমি তোমার মায়ের নিকট থাকিও; কখনই শিবিরের বাহির হইও না, এজিদ তোমাদের কিছুই করিতে পারিবে না।”

 জয়নালের মুখচুম্বনপূর্ব্বক তাহাকে শাহ্‌রেবানুর ক্রোড়ে দিয়া সখিনাকে সম্বোধনপূর্ব্বক হোসেন বলিলেন, “মা, আমি এক্ষণে বিদায় লইলাম। কাসেমের সংবাদ আনিতে যাই। আর দুঃখ করিও না, ঈশ্বর তোমাদের দুঃখ দূর করিবেন। আর একটি বীরপুরুষ হনুফা নগরে এখনও বর্ত্তমান আছেন।