যদি কোন প্রকারে এই লোমহর্ষণ সংবাদ তাহার কর্ণগোচর হয়, প্রাণান্ত না হওয়া পর্য্যন্ত তিনি তোমাদের এই কষ্টের প্রতিশোধ লইতে কখনই পরাঙ্মূখ হইবেন না; কখনই এজিদকে ছাড়িবেন না;—হয় তোমাদিগকে উদ্ধার করিবেন, নয় এজিদের হস্তে প্রাণত্যাগ করিবেন।”
সখিনাকে এইরূপে প্রবোধ প্রদানপূর্ব্বক অবশেষে শাহ্রেবানুর হস্ত ধরিয়া রণবেশী রণযাত্রী পুনরায় বলিলেন, “বোধ হয় আমার সঙ্গে এই তোমার শেষ দেখা। শাহ্রেবানু! মায়াময় সংসারের দশাই এইরূপ, তবে অগ্রপশ্চাৎ—এইমাত্র প্রভেদ;—ঈশ্বরের উপর নির্ভর করিয়া জয়নালকে সাবধানে রাখিও। আমার আর কোন কথা নাই—চলিলাম।”
শিবিরের বাহিরে আসিয়া এমাম হোসেন অশ্বে আরোহণ করিলেন। ওদিকে শিবিরমধ্যে পরিজনেরা এক প্রকার বিকৃত স্বরে ‘হায় হায়’ রবে ধূলায় গড়াগড়ি যাইতে লাগিলেন।
ষড়বিংশ প্রবাহ
এমাম হোসেনের অশ্বের পদধ্বনি শ্রবণ করিয়া এজিদের সৈন্যগণ চমকিত হইল। সকলের অন্তর কাঁপিয়া উঠিল। সকলেই দেখিতে লাগিল, হোসেন স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে আসিতেছেন। দেখিতে দেখিতে চক্ষের পলকে মহাবীর হোসেন যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, “ওরে বিধর্ম্মী পাপাত্মা এজিদ! তুই কোথায়? তুই নিজে দামেস্কে থাকিয়া নিরীহ সৈন্যদিগকে কেন রণস্থলে পাঠাইয়াছি। আজ তোকে পাইলে জাতি-বধ-বেদনা, ভ্রাতুপুত্র কাসেমের বিচ্ছেদ-বেদনা এবং স্বকীয় পুত্রগণের বিয়োগ বেদনা, সমস্তই আজ তোর পাপশোণিতে শীতল করিতাম—তোর প্রতি লোমকূপ হইতে হলাহল বাহির করিয়া লোমে লোমে প্রতিশোধ লইতাম। জানিলাম কাফেরমাত্রেই চতুর। রে নৃশংস! অর্থলোভ দেখাইয়া পরের সন্তানদিগকে অকালে নিধন করিবার নিমিত্ত