করিলেই তোর যুদ্ধসাধ মিটাইতেছি। বিলম্ব তোর পক্ষে মঙ্গল বটে, কিন্তু তাহা আমার অসহ্য!
হোসেনের মস্তক লক্ষ্য করিয়া তরবারি উত্তোলন পূর্ব্বক “তোমার মস্তকের মুল্য লক্ষ টাকা” এই বলিয়াই আবদুর রহ্মান ভীমবেগে তরবারি আঘাত করিল। হোসেনের বর্ম্মোপরি আবদুর রহ্মানের তরবারি সংলগ্ন হইয়া অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বহির্গত হইল। রহ্মান লজ্জিত হইয়া পলায়নের উপক্রম করিলে হোসেন বলিলেন, “অগ্রে সহ্য কর্, শেষে পলায়ন করিস্।” এই কথা বলিয়াই এক আঘাতে অশ্ব সহিত রহ্মানের দেহ তিনি দ্বিখণ্ডিত করিয়া ফেলিলেন। এই ঘটনা দেখিয়া এজিদের সৈন্যগণ মহাভয়ে কম্পিত হইতে লাগিল। কেহই আর হোসেনের সম্মুখীন হইতে সাহস করিল না। তাহারা বলিতে লাগিল, “যদি হোসেন আজ এ সময় পিপাসা নিবারণ করিতে বিন্দুমাত্রও জল পায়, তাহা হইলে আমাদের একটি প্রাণীও ইহার হস্ত হইতে প্রাণ বাঁচাইতে পারিবে না। যতই যুদ্ধ হউক না কেন, বিশেষ সতর্ক হইয়া দ্বিগুণ সৈন্য দ্বারা ফোরাতকূল এখনি ঘিরিয়া রাখাই কর্ত্তব্য। যে মহাবীর এক আঘাতে মহাবীর আবদুল রহ্মানকে নিপাত করিলেন, তাহার সম্মুখে কে সাহস করিয়া দাঁড়াইবে। আমরা রহ্মানের গৌরবেই চিরকাল গৌরব করিয়া বেড়াই, তাহারই যখন এই দশা হইল, তখন আমরা ত হোসেনের অশ্বপদাঘাতেই গলিয়া যাইব।” পরস্পর এইরূপ বলাবলি করিয়া সকলেই এক মত হইয়া দ্বিগুণ সৈন্য দ্বারা বিশেষ সুদৃঢ়রূপে ফোরাতকুল বন্ধ করিল।
হোসেন অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত সমরপ্রাঙ্গণে কাহাকেও না পাইয়া শত্রু শিবিরাভিমুখে অশ্বচালনা করিলেন। তদ্দর্শনে অনেকেরই প্রাণ উড়িয়া গেল। কেহ অশ্ব-পদাঘাতে নরকে গমন করিল, কেহ কেহ সাহসের উপর নির্ভর করিয়া হোসেনের সম্মুখে সশস্ত্র হইয়া দাঁড়াইল। কিন্তু তাহাদের হাতের অস্ত্র হাতেই রহিয়া গেল, মস্তকগুলি দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া দূরে দূরে বিনিক্ষিপ্ত হইল।
মহাবীর হোসেন বিধর্ম্মীদিগকে যেখানে পাইলেন, যে অস্ত্রে যে সুযোগে