পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৩৪

আমার কি দশা ঘটিবে? যাহার ভয়ে জলে পলাইয়া প্রাণরক্ষা করিয়াছি, ইচ্ছা করিয়া তাহার হাতে পড়িব? আমি ত কখনই যাইব না! মাথা কাটিয়া আনা ত শেষের কথা, নিকটেও যাইতে পারিব না।”

 অলীদকে সম্বোধন করিয়া সীমার বলিল, “ভাই অলীদ! তোমার অভিপ্রায় কি? তুমি হোসেনের মাথা কাটিয়া আনিতে পারিবে কি না?”

 অলীদ উত্তর করিলেন, “আমি হোসেনের বিরুদ্ধে যাহা করিয়াছি, তাহাই যথেষ্ট হইয়াছে। এজিদের বেতনভোগী হইয়া আজ কারবালা প্রান্তরে যাহা আমি করিলাম, জগৎ বিলয় না হওয়া পর্যন্ত মানবহৃদয়ে সমভাবে তাহা পাষাণে খোদিত হইয়া থাকার মতই থাকিবে। ইহার পরিণাম ফল কি আছে,—ভবিতব্য কি আছে, তাহা কে জানে ভাই!—ভাই! তোমরা আমাকে মার্জ্জনা কর, আমি পারিব না—হোসনের মাথাও আমি কাটিতে চাই না, লক্ষ টাকা পুরস্কারেরও আশা করি না। যাহার হৃদয়ে রক্তমাংসের লেশমাত্রও নাই, লক্ষ টাকার লোভে সে এই নিষ্ঠুর কার্য্য করুক।

 সদর্পে সীমার বলিয়া উঠিল, “দেখিলাম তোমাদের বীরত্ব—দেখিলাম তোমাদের সাহস—বুঝিলাম তোমাদের ক্ষমতা!—এই দেখ, আমি এখনই হোসেনের মাথা কাটিয়া আনি?”—এই কথা বলিয়াই সীমার খঞ্জর-হস্তে এক লম্ফে হোসেনের বক্ষের উপর গিয়া বসিল।

 যে সীমারের নামে অঙ্গ শিহরিয়া উঠিয়াছিল, যে সীমারের নামে হৃদয় কঁপিয়া উঠিয়াছিল, পাঠক! এই সেই সীমার! সু-ধার খঞ্জর-হস্তে সেই সীমার ঐ হোসেনের বক্ষের উপর বসিয়া গলা কাটিতে উদ্যত হইল!! হোসেন জীবিত আছেন, উঠিবার শক্তি নাই। অন্যমনস্ক কি চিন্তায় অভিভূত ছিলেন, তিনিই জানেন। চক্ষু মেলিয়া বক্ষের উপর খর-হস্তে সীমাকে দেখিয়া তিনি বলিতে লাগিলেন, “তুমি ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব—তুমি আমার বক্ষের উপর বসিলে? নূরনবী মোহাম্মদের মতাবলম্বী হইয়া এমাম হোসেনের বক্ষের উপর পা রাখিয়া বসিলে? তোমার