পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৩৬

দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল, হস্ত দ্বারা বারংবার খঞ্জরের ধার পরীক্ষা করিয়া দেখিল। পুনরায় অধিক জোরে সে খঞ্জর চালাইতে লাগিল। কিছুতেই কিছু হইল না! তিলমাত্র চর্ম্মও কাটিল না! সীমার অপ্রস্তুত হইল। আবার সে খঞ্জরের প্রতি ঘন ঘন দৃষ্টিপাত করিতে লাগিল—আবার ভাল করিয়া দেখিয়া খঞ্জরের ধার পরীক্ষা করিল।

 হোসেন বলিলেন, “সীমার? কেন বারবার এ সময় আমাকে কষ্ট দিতেছ? শীঘ্রই মাথা কাটিয়া ফেল! আর সহ্য হয় না। অনর্থক আমাকে কষ্ট দিয়া তোমার কি লাভ হইতেছে? বন্ধুর কার্য্য কর।—শীঘ্রই আমার মাথা কাটিয়া ফেল।”

 “আমি ত কাটিতে বসিয়াছি, সাধ্যানুসারে চেষ্টাও করিতেছি। খঞ্জরে না কাটিলে আমি আর কি করিব? এমন সুতীক্ষ খঞ্জর তোমার গলায় বসিতেছে না, আমার অপরাধ কি—আমি কি করিব?”

 হোসেন বলিলেন, “সীমার! তোমার বক্ষের বসন খোল দেখি?”

 “কেন?”

 “কারণ আছে। তোমার বক্ষ দেখিলেই জানিতে পারি যে, তুমি আমার ‘কাতেল’ (হস্তা) কি না?”

 “তাহার অর্থ কি?

 “অর্থ আছে। অর্থ না থাকিলে বৃথা তোমাকে এমন অনুরোধ করিব কি জন্য? তোমরা সকলেই জান,অন্ততঃ শুনিয়া থাকিবে, হোসেন কখনও বৃথা বাক্যব্যয় করে না। মাতামহ আমাকে বলিয়া গিয়াছেনঃ রক্তমাংসে গঠিত হইলেও যে বক্ষ লোমশূন্য, সে বক্ষ পাষাণময়, সেই লোমশূন্য বক্ষই তোমার কাতেল; যাহার বক্ষ লোমশূন্য তাহারই হস্তে তোমার নিশ্চয়ই মৃত্যু! মাতামহের বাক্য অলঙ্ঘনীয়। সীমার! তোমার বক্ষের বস্ত্র খুলিয়া ফেল।আমি দেখি, যদি তাহা না হয়, তবে তুমি বৃথা চেষ্টা করিবে কেন? তোমার জীবনকাল পর্যন্ত আমাকে এ প্রকারে যন্ত্রণা দিয়া,—সহস্র চেষ্টা করিলেও আমার দেহ হইতে মস্তক বিচ্ছিন্ন করিতে পারিবে না।”