পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩৭
মহরম পর্ব্ব—ষড়বিংশ প্রবাহ

সীমার গাত্রের বসন উন্মোচন করিয়া হোসেনকে দেখাইল; নিজেও দেখিল। হোসেন সীমারের বক্ষের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দুই হস্তে দুই চক্ষু আবরণ করিলেন। সীমার সজোরে হোসেনের গলায় খঞ্জর দাবাইয়া ধরিল, কিন্তু এবারেও কাটিল না! বারবার খঞ্জর ঘর্ষণে হোসেন বড়ই কাতর হইলেন। তিনি পুনরায় সীমারকে বলিতে লাগিলেন, “সীমার! আর একটি কথা আমার মনে হইয়াছে, বুঝি তাহাতেই খঞ্জরের ধার ফিরিয়া গিয়াছে; তোমার পরিশ্রম বৃথা হইতেছে, আমিও যারপরনাই কষ্টভোগ করিতেছি। সীমার! মাতামহ জীবিতাবস্থায় অনেক সময় স্নেহ করিয়া আমারই গলদেশ চুম্বন করিয়াছিলেন। সেই পবিত্র ওষ্ঠের চুম্বনমাহাত্ম্যেই তীক্ষ্ণধার অস্ত্র ব্যর্থ হইয়া যাইতেছে। আমার মস্তক কাটিতে আমি তোমাকে বারণ করিতেছি না; আমার এই প্রার্থনা যে, আমার কণ্ঠের পশ্চাদভাগে, যেখানে তীরের আঘাতে শোণিত প্রবাহিত হইতেছে, সেইখানে খঞ্জর বসাও, অবশ্যই দেহ হইতে মস্তক বিচ্ছিন্ন হইবে।

 “না, তাহা কখনই হইবে না। আমি অবশ্যই এই প্রকারে তোমার মাথা কাটিব।”

 “সীমার! আমাকে এ প্রকার কষ্ট দিয়া তোমার কি লাভ? কিছুতেই তোমার কার্য্যসিদ্ধি হইবে না। আমি মিনতি করিয়া বলিতেছি, আমার গলার সম্মুখ দিকে আর খঞ্জর চালাইও না। তোমার যত্ন নিস্ফল হইবে, আমিও কষ্ট পাইব, অথচ তুমি মাথা কাটিতে পারিবে না। দেখ, নিশ্বাস ফেলিতে আমার বড়ই কষ্ট হইতেছে। শীঘ্র শীঘ্র তোমার কার্য্য শেষ করিলে, তোমারও লাভ, আমারও কষ্ট নিবারণ হয়। এ জীবনে কখনও মিথ্যা কথা বলি নাই। তুমি ঐ তীরবিদ্ধ স্থানে খঞ্জর বসাও, এখনই ফল দেখিতে পাইবে। আমাকে এ প্রকার কষ্ট দিলে এজিদের অঙ্গীকৃত লক্ষ টাকা অপেক্ষা তোমার অধিক আর কি লাভ হইবে?”

 “তোমার কথা শুনিলে আমার কি লাভ হইবে?”

 “অনেক লাভ হইবে। তুমি আমার প্রতি সদয় হইয়া এই অনুগ্রহ কর যে, আমার গলার এদিকে আর খঞ্জর চালাইও না; তীরবিদ্ধ স্থানে