পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৩৮

অস্ত্র বসাইয়া আমার মস্তক কাটিয়া লও—আমি ধর্ম্মতঃ প্রতিজ্ঞা করিতেছি, পরকালে তোমাকে অবশ্যই মুক্ত করাইব।—বিনা বিচারে তোমাকে স্বর্গসুখে সুখী করাইব। পুনঃপুনঃ ঈশ্বরের নাম করিয়া আমি ধর্ম্মতঃ প্রতিজ্ঞা করিতেছি, তোমাকে স্বর্গে লইয়া যাইতে না পারিলে আমি কখনই স্বর্গের দ্বারে পদনিক্ষেপ করিব না। ইহা অপেক্ষা তুমি আর কি লাভ চাও, ভাই?”

 হোসেনের বক্ষের পরিবর্ত্তে সীমার এইবার তাহার পৃষ্ঠোপরি চাপিয়া এমামের দুইখানি হস্ত দুই দিকে পড়িয়া গেল,—তিনি বলিতে লাগিলেন, “জগৎ দেখুক, আমি কি অবস্থায় চলিলাম! নূরনবী মোহাম্মদের দৌহিত্র,—মদিনার রাজা-মহাবীর আলীর পুত্র হইয়া শূন্যহস্তে সীমারের অস্বাঘাতে কি ভাবে আমি ইহসংসার হইতে বিদায় হইলাম, জগৎ দেখুক।”

 সীমার যেমন তীরবিদ্ধ স্থানে খঞ্জর স্পর্শ করিল অমনি হোসেনের শির দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া গেল। স্বর্গ, মর্ত্ত্য, পাতাল, অরণ্য, সাগর, পর্ব্বত, বায়ু ভেদ করিয়া চতুর্দ্দিক হইতে রব উত্থিত হইতে লাগিল, “হায় হোসেন! হায় হোসেন!! হায় হোসেন!!!”

 সীমার ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে হোসেনের শির লইয়া প্রস্থান করিল। রক্তমাখা খঞ্জর এমামের দেহের নিকট পড়িয়া রহিল।

মহরম পর্ব্ব সমাপ্ত