পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪১
উদ্ধার পর্ব্ব—প্রথম প্রবাহ

হইতে পারে? ঐ যে অশ্বপদশব্দ! কে শিবিরাভিমুখে আসিতেছে। কাহার অশ্ব? হায় রে! এ কাহার অশ্ব? শহরেবানু শিবিরদ্বারদেশে যাইতেই রক্তমাখা শরীরে হোসেনের অশ্ব শিবিরে প্রবেশ করিল। “ভগ্নি! কপাল পুড়িয়াছে! আমাদের কপাল পুড়িয়াছে! দেখ, অশ্য দেখ, দুল্‌দুলের তীর-সংযুক্ত শরীর দেখ, রক্তের প্রবাহ দেখ!” বলিতে বলিতে শাহূরেবানু অচেতনভাবে পড়িয়া গেলেন। আর আর পরিজনের শূন্যপৃষ্ঠ দুল্‌দুলের সমস্ত শরীর রক্ত রঞ্জিত, আঘাতে জরজর এবং তাহার দেহ বিনির্গত শোণিতের ধারা দেখিয়া, মর্ম্মভেদী আর্ত্তনাদ—কেহ হতচেতন অবস্থায় বিকট চিৎকার করিয়া, অচেতনভাবে ধরাশায়ী হইলেন। দুল্‌দুল কাঁপিতে কাঁপিতে মাটিতে পড়িয়া গেল। হোসেনের প্রিয়তম অশ্বের প্রাণ বায়ুর সহিত মিশিয়া অনন্ত আকাশে চলিয়া গেল।

 এদিকে মারওয়ান, ওমর, অলীদ, জেয়াদ প্রভৃতি যোদ্ধাগণ উগ্রমুর্ত্তিতেে বিকট শব্দে “কৈ জয়নাল? কোথায় সখিনা?” নাম উচ্চারণ করিতে করিতে শিবিরমধ্যে প্রবেশ করিল। কিন্তু দক্ষিণে, বামে, সম্মুখে, কিঞ্চিৎ দূরে দৃষ্টি পড়িবামাত্র তাহাদের শরীর হঠাৎ শিহরিয়া উঠিল, বীরহৃদয় কম্পিত হইল;—সেই হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার হইল!-কি মর্ম্মভেদী দৃশ্য!

 বীরবর আবদুল ওহাবের খণ্ডিত দেহ, কাসেমের মৃত্যুশয্যা, হোসেনের অশ্ব, পতিপ্রাণ! সখিনার পতিভক্তির চিহ্ন দেখিয়া তাহারা স্তম্ভিত হইয়া দণ্ডায়মান রহিল! মন্ত্রি প্রবর মারওয়ান একদৃষ্টে সখিনার প্রতি অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত চাহিয়াও, সখিনা মৃত কি জীবিত কিছুই নির্ণয় করিতে পারিল না; কিঞ্চৎ অগ্রসর হইয়া দেখিলঃ সখিনা বিবি স্বামী-পদ দুখানি বক্ষোপরি স্থাপন করিয়া মনঃপ্রাণ যেন ঈশ্বরে ঢালিয়া দিয়া আত্মসমর্পণ করিয়াছেন! পতি-দেহ-বিনির্গত পবিত্র শোণিতে তাহার পবিত্র দেহ রঞ্জিত হইয়া অপূর্ব্ব এ শ্রী ধারণ করিয়াছে! মৃতদেহে চন্দন, আতর ও কপূর দিবার ব্যবস্থা শাস্ত্রে আছে। সখিনা অঙ্গে রক্তচন্দনে চর্চিত হইয়া জীবন্তভাবে যেন দয়াময়ের নিকট স্বামীর মঙ্গল-কামনায় আত্মবিসর্জ্জন করিয়া রহিয়াছেন।

 মারওয়ান আরও একটু অগ্রসর হইল। সখিনাকে ধরিয়া তুলিতে