পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৪৬

ব্যস্ত—মহাব্যস্ত—প্রাণ ওষ্ঠাগত! তোমারই জন্য—কেবলমাত্র তোমারই কারণে—কত জনে তীর, তরবারী, বন্দুক, বর্শা, গোলাগুলী অকাতরে বক্ষঃ পাতিয়া বুকে ধরিতেছে,তোমারই জন্য অগাধ জলে ডুবিতেছে, ঘোর অরণ্যে প্রবেশ করিতেছে, পর্ব্বতশিখরে আরোহণ করিতেছে; রক্ত, মাংসপেশী, পরমাণু সংযোজিত শরীর, তোমারই জন্য শূন্যে উড়াইতেছে। কি কুহক! কি মায়া!! কি মোহিনী শক্তি!! তোমার কুহকে কে না পড়িতেছে।—কে না ধোকা খাইতেছে?—কে না মরিতেছে? তুমি দূর হও! তুমি দূর হও!—কবির কল্পনার পথ হইতে একেবারে দূর হও! কবির চিন্তাধারা হইতে একেবারে সরিয়া যাও! তোমার নাম করিয়া কথা কহিতেও অঙ্গ শিহরিয়া উঠে। তোমারই জন্য প্রভু হোসেনের শির সীমারহস্তে খণ্ডিত!—রাক্ষসি! তোমারই জন্য সেই খণ্ডিতশির বর্শাগ্রে বিদ্ধ!

 সীমার অবিশ্রান্ত যাইতেছে। দিনমণি মলিনমুখ, অস্তাচলগমনে উদ্যোগী। সীমারের অন্তরে নানা ভাব; তন্মধ্যে অর্থ চিন্তাই প্রবল; চির অভাবগুলি আশু মোচন করিতেই সে স্থির-সংকল্প। “একাই মারিয়াছি, একাই কাটিয়াছি, একাই যাইতেছি, একাই পাইব, আর ভাবনা কি? লক্ষ টাকার অধিকারী আমিই। চিন্তার কোন কারণ নাই! নিশাও প্রায় সমাগত যাই কোথা? বিশ্রাম না করিলেও আর বাঁচি না। নিকটস্থ পল্লীতে কোন গৃহীর আবাসে যাইয়া নিশাযাপন করি। এ ত সকলই মহারাজ এজিদনামদারের রাজ্যভুক্ত। আমার সৈনিক বেশ, হস্তে বর্শা, বাগ্রে মনুষ্যশির বিন্ধ, মুখে ভয়ানক রোষের লক্ষণ!সুতরাং কে কি বলিবে? কার সাধ্য—কে কি করিবে?”—সীমার স্বগত এই কথাগুলি বলিল।

 তারপর সীমার এক গৃহীর আশ্রয়ে উপস্থিত হইয়া,ঐ স্থানে সে নিশাযাপন করিবে,—এই কথা জানাইল। তাহার স্কন্ধে বর্শা-বিদ্ধ খণ্ডিতশির, তাহার দেহ অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত। বুঝি রাজকর্ম্মচারী হইবে মনে করিয়া গৃহস্বামী আর কোন কথা বলিলেন না। সাদরে তিনি সীমারকে স্থান নির্দেশ করিয়া দিলেন, পথশ্রান্তি দূরীকরণের উপকরণাদি ও আহারীয় দ্রব্যসামগ্রী আনিয়া ভক্তিসহকারে অতিথি-সেবা করিলেন। ক্ষণকাল বিশ্রামের পর অতি