পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৭
উদ্ধার পর্ব্ব—দ্বিতীয় প্রবাহ

বিনীত ভাবে তিনি বলিলেন, “মহাশয়! যদি অনুমতি করেন, তবে একটি কথা জিজ্ঞাসা করি।”

 সীমার বলিল,—“কি কথা—”

 “কথা আর কিছু নহে, আপনি কোথা হইতে আসিতেছেন? আর এই বর্শা-বিদ্ধ শির কোন মহাপুরুষের?”

 “ইহার অনেক কথা। তবে তোমাকে অতি সংক্ষেপে বলিতেছি। মদিনার রাজা হোসেন, তাঁহার পিতা আলী এবং মোহাম্মদের কন্যা ফাতেমা যাঁহার জননী, এ তাহারাই শির। কারবালা-প্রান্তরে, মহারাজ এজিদপ্রেরিত সৈন্যের সহিত সমরে পরাস্ত হইয়া হোসেনের এই অবস্থা। তাহার দেহ হইতে মস্তক ভিন্ন করিয়া মহারাজের নিকট লইয়া যাইতেছি। পুরস্কার পাইব। লক্ষ টাকা পুরস্কার! তুমি পৌত্তলিক, তোমার গৃহে নানা দেবদেবীর প্রতিমূর্তি আছে দেখিয়াই তোমার আতিথ্য গ্রহণ করিয়াছি। মোহাম্মদের শিষ্য হইলে কখনও তোমার গৃহে আসিতাম না, তোমার আদর-অভ্যর্থনাতেও ভুলিতাম না, তোমার আহারও গ্রহণ করিতাম না।”

 “হাঁ, এতক্ষণে জানিলাম, আপনি কে? আর আপনার অনুমানও মিথ্যা নহে। আমি একেশ্বরবাদী নহি। নানাপ্রকার দেব-দেবীই আমার উপাস্য। আপনি মহারাজ এজিদের প্রিয় সৈন্য, আমার অপরাধ গ্রহণ করিবেন না। স্বচ্ছন্দে বিশ্রাম করুন। কিন্তু বর্শা-বিদ্ধ শির এ প্রকারে রাখিয়া আমার নিকট দিলে ভাল হইত। আমি ইহা আজ রাত্রে আপন তত্ত্বাবধানে রাখিতাম। প্রাতে আপনি যথা ইচ্ছা গমন করিতেন। কারণ, যদি কোন শত্রু আপনার অনুসরণে আসিয়া থাকে, নিশীথ-সময়ে সে কৌশলে, কি বলপ্রয়োগে এই মহামূল্য শির যদি আপনার নিকট হইতে কাড়িয়া লয়, কি আপনি ক্লান্তিজনিত অবশ অলসে ঘোর নিদ্রায় অচেতন হইলে আপনার অজ্ঞাতে এই মহামুল্য শির,—আপাততঃ যাহার মূল্য লক্ষ টাকা—যদি কেহ লইয়া যায়, তবে তাহা মহাদুঃখের কারণ হইবে। শিরটি আমাকে দিন; আমি সাবধানে রাখিব, আপনি প্রত্যুষে ইহা পুনরায় লইবেন। শিরটি আমার তত্ত্বাবধানে রাখিলে আপনি নিশ্চিন্তভাবে নিদ্রাসুখ অনুভব করিতে পারিবেন।”