পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫১
উর্দ্ধার পর্ব্ব—দ্বিতীয় প্রবাহ

 জগৎ জাগিল। পূর্ব গগন লোহিত রেখায় পরিশোভিত হইল। সীমার শয্যা হইতে উঠিয়া প্রাতঃক্রিয়াদি সমাপন করিল। সজ্জিত হইয়া সে বর্শা হস্তে দণ্ডায়মান রহিল। এবং উচ্চৈঃস্বরে বলিল, “ওহে! আর বিলম্ব করিতে পারিবে না। আমার রক্ষিত মস্তক আনিয়া দাও। শীঘ্রই যাইব।”

 আজর বহির্ভাগে আসিয়া বলিলেন, “ভ্রাতঃ! তোমার নামটি কি, শুনিতে চাই। আর তুমি কোন্‌ ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব তাহাও জানিতে চাই। ভাই, রাগ করিও না; ধর্ম্মনীতি, রাজনীতি, যুদ্ধনীতি, অর্থনীতি, যুক্তি, বিধি-ব্যবস্থা ইহার কিছুতেই এ কথা পাওয়া যায় না যে, শত্রুর মৃত শরীরেও শত্রুতা সাধন করিতে হয়। বন্য পশু এবং অসভ্য জাতিরাই মৃত শরীরে নানা প্রকার লাঞ্ছনা দিয়া মনে মনে আনন্দ অনুভব করে। ভ্রাতঃ! তোমার রাজা সুসভ্য, তুমিও দিব্য সভ্য। এ অবস্থায় এ পশু আচার কেন ভাই?”

 “রাত্রে আমাকে আশ্রয় দিয়াছ, তোমার প্রদত্ত অন্নে উদর পরিপূর্ণ করিয়াছি; সুতরাং সীমারের বর্শা হইতে তুমি রক্ষা পাইলে। সাবধান! সকল হিতোপদেশ আর কখনও মুখে আনিও না। তোমার হিতোপদেশ তোমার মনেই থাকুক! ভাই সাহেব! বিড়াল-তপস্বী, কপট ঋষি, ভ গুরু, স্বার্থপর পীর, লোভী মৌলভী, জগতে অনেক আছে, অনেক দেখিয়াছি,—আজও দেখিলাম। তোমার ধর্ম্মকাহিনী, তোমার রাজনৈতিক উপদেশ, তোমার যুক্তি, কারণ, বিধিব্যবস্থা সমুদয় তুলিয়া রাখ। ধর্মাবতারের ধূর্ততা, চতুর সীমারের বুঝিতে আর বাকী নাই, ও-কথায় মহাবীর সীমার ভুলিবে না। আর এ সোজা কথাটা কে না বুঝিবে যে, হোসেন-মস্তক তোমার নিকট রাখিয়া যাই, আর তুমি দামেস্কে গিয়া মহারাজের নিকটে বাহাদুরী জানাইয়া লক্ষ টাকার পুরস্কার লাভ কর। যদি ভাল চাও, যদি প্রাণ বাঁচাইতে ইচ্ছা কর, যদি কিছু দিন জগতের মুখ দেখিতে বাসনা হয়, তবে শীঘ্র হোসেনের মাথা আনিয়া দাও।”

 “ওরে ভাই! আমি তোমার মত স্বার্থপর অর্থলোভী নহি। আমি দেবতার নাম করিয়া বলিতেছি, অর্ধলালসায় হোসেন-মস্তক কখনই