পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৫৪

 “ধন্য সায়াদ! তুমি ধন্য! জগতে তুমিই ধন্য! পরোপকার-ব্রতে তুমিই যথার্থ দীক্ষিত! তোমার জন্ম সার্থক; আমারও জীবন সার্থক। যে উদরে জন্মিয়াছ, সে উদরও সার্থক! প্রাণাধিক! জগতে জন্মিয়া পশুপক্ষীদিগের ন্যায় নিজ উদর পরিপোষণ করিয়া চলিয়া গেলে মনুষ্যত্ব কোথায় থাকে?” ইহা বলিয়াই আজর দোলায়মান খড়গ টানিয়া লইয়া হস্ত উত্তোলন করিলেন।

 পরের জন্য—বিশেষতঃ, খণ্ডিত মস্তকের জন্য—আজর হৃদয়ের হৃদয়, আত্মার আত্মা, প্রাণের প্রাণ জ্যেষ্ঠপুত্রের গ্রীবা লক্ষ্যে খড়গ উত্তোলন করিলেন। পিতার হস্ত উত্তোলনের ইঙ্গিত দেখিয়া সায়াদ গ্রীবা নত করিলেন, আজরের স্ত্রী চক্ষু মুদ্রিত করিলেন। কবির কল্পনা-আঁখি ধাঁধা লাগিয়া বন্ধ হইল। সুতরাং কি ঘটিল, কি হইল, লেখনী তাহা প্রকাশ করিতে পারিল না।

 উঃ! কি সাহস! কি সহ্যগুণ! দেখ্‌রে! পাষাণ্ড এজিদ! দেখ্‌! পরোপকারব্রতে পিতার হস্তে সন্তানের বধ দেখ! সীমার! তুইও দেখ,! মনুষ্য জীবনের ব্যবহার দেখ! খড়গ কম্পিত হইল, পরোপকার আর মৃত শিরের সৎকারহেতু প্রাণাধিক পুত্রশোণিতে আজ পিতার হস্ত রঞ্জিত হইল, লৌহনির্ম্মিত খড়গ কঁপিয়া স্বাভাবিক ঝন্ ঝন্ রবে আর্তনাদ করিয়া উঠিল; কিন্তু আজরের রক্তমাংসের শরীর হেলিল না, শিহরিল না—মুখমণ্ডল মলিন হইল না। ধন্য রে পরোপকার! ধন্য রে হৃদয়!!

এ দিকে সীমার বর্শাহস্তে বহির্ভাগে দণ্ডায়মান হইয়া চীৎকার করিয়া বলিতেছে, “খণ্ডিতশির হস্তে না করিয়া যে আমার সম্মুখে আসিবে, তাহারই মস্তক ধূলায় লুষ্ঠিত হইবে, অথচ হোসেনের মস্তকও লইয়া যাইব।”

 আজর খণ্ডিতশির হস্তে করিয়া সীমার সম্মুখে উপস্থিত হইলে, সীমার মহাহর্ষে শিরটি বর্শায় বিদ্ধ করিতে যাইয়া দেখিল—সদ্যকর্তিত একটি শির, শোণিতে রঞ্জিত, রক্তধারা বহিয়া পড়িতেছে। সীমায় আশ্চর্যান্বিত হইয়া বলিল,