পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৫
উদ্ধার পর্ব্ব—দ্বিতীয় প্রবাহ

“এ কি! তুমি উন্মাদ হইয়া এ কি করিলে! এ মস্তক লইয়া আমি কি করিব? লক্ষ টাকা-প্রাপ্তির আশায় হোসেন-মস্তক লইয়া গোপন করিয়া কাহাকে তুমি বধ করিলে? তোমার মত নরপিশাচ অর্থলোভী ত আমি কখনও দেখি নাই। আহা! এই বুঝি তোমার হিতোপদেশ! এই বুঝি তোমার পরোপকারব্রত। আরে নরাধম! এই বুঝি তোর সাধুতা? কি প্রবঞ্চক! কি পাষণ্ড! ওরে নরপিশাচ! আমাকে ঠকাইতে আসিয়াছিস্?”

 “ভ্রাতঃ! আমি ঠকাইতে আসি নাই। তুমি ত বলিয়াছ যে, খণ্ডিত মস্তক পাইলেই চলিয়া যাইবে। এখন এ কি কথা?—এক মুখে দুই কথা কেন ভাই?”

 “আমি কি জানিতাম যে, তুমি একজন প্রধান দস্য। টাকার লোভে তুমি কখন কাহার কি সর্বনাশ করিবে কে জানিত!”  “তুমি কি পুণ্যবলে হোসেনের মস্তক কাটিয়াছিলে ভাই! মস্তক পাইলেই চলিয়া যাইবে কথা ছিল, এখন বিলম্ব কেন? আমার কথা আমি রক্ষা করিলাম; এখন তোমার কথা তুমি ঠিক রাখ।”

 “কথা কাটাকাটি করিলে চলিবে না! যে মস্তকের জন্য কারবালা-প্রান্তরে রক্তের স্রোত বহিতেছে, যে মস্তকের জন্য মহারাজ এজিদ ধনভাণ্ডার খুলিয়া দিয়াছেন, যে মস্তকের জন্য চতুর্দিকে ‘হায় হোসেন’ ‘হায় হোসেন’ রব উঠিতেছে, সেই মস্তকের পরিবর্তে এ কি?—ইহাতে আমার কি লাভ হইবে? তুমি আমার প্রদত্ত মস্তক আনিয়া দাও।”

 “ভাই! তুমি তোমার কথা ঠিক রাখিলে না, ইহাই আমার দুঃখ। ইহা ত মানুষের ধর্ম্ম নহে।”

 সীমার গোলযোগে পড়িল, একটু চিন্তা করিয়া বলিল, “এ শির এইখানে রাখিয়া দাও, আমি খণ্ডিত মস্তক পাইলেই চলিয়া যাইব, পুনরায় প্রতিজ্ঞা করিলাম। আন দেখি, এবার হোসেনের শির না আনিয়া আর কি আনিবে? আন দেখি।”

 আজরের মুখের ভাব দেখিয়া মধ্যম পুত্র বলিল, “পিতঃ, চিন্তা কি? আমরা সকলই শুনিয়াছি, খণ্ডিত মস্তক পাইলেই সৈনিকপ্রবর চলিয়া