পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় প্রবাহ

 সময়ে সকলই সহ্য হয়। কোন বিষয়ে অনভ্যাস থাকলে বিপদ-কালে তাহা অভ্যাস হইয়া পড়ে, মহাসুখের শরীরেও মহা কষ্ট সহ্য হইয়া থাকে,—এ কথার মর্ম্ম হঠাৎ বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিমাত্রেই বুঝিতে পারিবেন। পরাধীন জীবনে সুখের আশা করাই বৃথা। বন্দী অবস্থায় ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ বিবেচনা করাও নিস্ফল। চতুর্দিকে নিষ্কোষিত অসি, স্বরিতগতি বিদ্যুতের ন্যায় বর্শাফলক সময় সময় চক্ষে ধাঁধা দিতো। বন্দিগণ মলিনমুখ হইয়। দামেস্কে যাইতেছে, কাহার ভাগ্যে কি আছে, কে বলিতে পারে? সকলেরই একমাত্র চিন্তা—জয়নাল আবেদীন। এজিদ সকলের মস্তক লইয়াও যদি জয়নালের প্রতি দয়া করেন, তাহা হইলেও সহস্রগুণে ভাল। দামেস্ক নগরের নিকটবর্তী হইলে সকলেই এজিদ-ভবনে আনন্দ-বাদ্যধ্বনি শুনিতে পাইলেন। সীমার হোসেনের শির লইয়া পূর্বেই আসিয়াছে, কাজেই আনন্দের লহরী ছুটিয়াছে, নগরবাসীর উৎসবে মাতিয়াছে। মহারাজ এজিদের জয়! দামেস্ক-রাজের জয়-ঘোষণা মুহূর্তে মুহূর্তে ঘোষিত হইতেছে। নানা বর্ণের রঞ্জিত পতাকারাজি উচ্চ উচ্চ মঞ্চে উড্ডায়মান হইয়া মহাসংগ্রামের বিজয় ঘোষণা করিতেছে। আজ এজিদ আনন্দ-সাগরে সন্তোষ-তরঙ্গে সভাসদ্‌গণের সহিত মনপ্রাণ ভাসাইয়া দিয়াছেন। বন্দিগণ রাজপ্রাসাদে অনীত হইলে, দ্বিগুণরূপে আনন্দবাদ্য বাজিয়া উঠিল। এজিদ যুদ্ধবিজয়ী সৈন্যদিগকে আশার অতিরিক্ত পুরস্কৃত করিলেন, শেষে মনের উল্লাসে ধনভাণ্ডার খুলিয়া দিলেন। অবারিত দ্বার!—যাহার যত ইচ্ছা তত লইয়া মনের উল্লাসে রাজাদেশে আমোদ-আহলাদে প্রবৃত্ত হইল; অনেকেই আমোদে মাতিল।

হাসূনেবানু, শাহরেবানু, জয়নাব, বিবি ফাতেমা (হোসেনের অল্পবয়স্কা কন্যা) এবং বিবি ওম্মে সালমা[১] প্রভৃতিকে দেখিয়া এজিদ

  1. ওম্মে সালমা হজরত মোহাম্মদের ষষ্ঠ স্ত্রী