পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৬০

মহাহর্ষে হাসি-হাসি মুখে বলিতে লাগিলেন, “বিবি জয়নাব! এখন আর কার বল বলুন? বিধবা হইয়াও হোসেনের বলে এজিদকে ঘৃণার চক্ষে দেখিয়াছেন, এখন সে হোসেন কোথায়? আর হাসানই বা কোথায়? আজ পর্য্যন্তও কি আপনার অন্তরের গরিমা-চক্ষের ঘৃণা অপরিসীম ভাবেই রহিয়াছে? আজ কার হাতে পড়িলেন, ভাবিয়াছেন কি? দেখুন দেখি, চেষ্টায় কি না হয়? ধন, রাজ্য, রূপ তুচ্ছ করিয়াছিলেন; একবার ভাবিয়া দেখুন দেখি, রাজ্যে কি না হইল? বিবি জয়নাব! মনে আছে, সেই আপনার গৃহনিকটস্থ রাজপথ? মনে করুন, সেদিন আমি সৈন্য-সামন্ত লইয়া মৃগয়ায় যাইতেছিলাম, আপনি আমাকে দেখিয়াই গবাক্ষদ্বার বন্ধ করিয়া দিলেন। কে না জানিল যে, দামেস্কের রাজকুমার মৃগয়ায় গমন করিতেছেন! শত সহস্র চক্ষু আমাকে দেখিতে ঔৎসুক্যের সহিত ব্যস্ত হইল, কেবল আপনার দুটি চক্ষু তখনই ঘৃণা প্রকাশ করিয়া আড়ালে অন্তর্দ্ধান হইল। সে দিনের আপনার সে অহঙ্কার কই? সে দোলায়মান কর্ণাভরণ কোথায়? আপনার সে কেশ-শোভা, মুলার জালি কোথায়? এ ভীষণ সমর কাহার জন্য? এ শোণিতপ্রবাহ কাহার জন্য? কি দোষে এজিদ আপনার ঘৃণাই? কি কারণে এজিদ আপনার চক্ষের বিষ? কি কারণে দামেস্কের পাটরাণী হইতে আপনার অনিচ্ছা?”

 জয়নাব আর সহ্য করিতে পারিলেন না, আরক্তিম লোচনে বলিতে লাগিলেন, “কাফের! তোর মুখের শাস্তি ঈশ্বর দিবেন। সর্ব্বস্ব হরণ করিয়া আমাকে একেবারে নিঃসহায়, নিরাশ্রয় করিয়া বন্দীভাবে দামেস্ক আনিয়াছিস্‌, তাই বলিয়াই কি এত গর্ব্ব? তোর মুখের শাস্তি, তোর চক্ষের বিধান, যিনি করিবার তিনিই করিবেন। তোর হাতে পড়িয়াছি, যাহা ইচ্ছা বলিতে পারি। কিন্তু কাফের! ইহার প্রতিশোধ অবশ্যই আছে। তুই সাবধানে কথা বলিস; জয়নাব নামেমাত্র জীবিতা,—এই দেখ্‌, (বস্ত্রমধ্যস্থ খঞ্জর দেখাইয়া) এমন প্রিয়বস্তু সহায় থাকিতে, বল্‌ ত কাফের, তোকে কিসের ভয়?

 এজিদ আর কথা কহিলেন না। জয়নাবের নিকট কত কথা কহিবেন,