পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৬৪

স্বর্গীয় প্রধান দূত জেব্রাইল অতি ব্যস্ততা সহকারে ঘোষণা করিতেছেন, দ্বার খুলিয়া দাও। প্রহরিগণ। আজ স্বর্গের দ্বার, সপ্ততল আকাশের দ্বার খুলিয়া দাও। পুণ্যাত্ম তপস্বী, সিদ্ধপুরুষ, ঈশ্বরভক্ত, ঈশ্বরপ্রণয়ী প্রাণিগণের অমরত্মার বন্দিগৃহের দ্বার খুলিয়া দাও। স্বর্গীয় দূতগণ! অমর পুরবাসী নরনারিগণ! প্রস্তুত হও। হোসেনের এবং অন্য অন্য মহারথিগণের দৈহিক সৎক্রিয়া সম্পাদনের জন্য মর্ত্ত্যলোকে যাইবার আদেশ হইয়াছে। দ্বার খুলিয়া দাও, প্রস্তুত হও!”

 মহা হুলুস্থূল পড়িয়া গেল। “অল্পক্ষণের জন্য আবার মর্ত্ত্যলোকে” অমরাত্মাগণ এই বলিয়া স্ব স্ব রূপ ধারণ করিলেন। এদিকে হজরত জেব্রাইল আপন দলবলসহ সকলের পূর্ব্বেই কারবালা প্রান্তরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ক্রমে সকলের আবির্ভাব হইতে আরম্ভ হইল। দেখিতে দেখিতে জনমানবশূন্য প্রান্তর, পুণ্যাত্মাদিগের আগমনে পরিপূর্ণ হইয়া গেল; বালুকাময় প্রান্তরে সুস্নিগ্ধ বায়ু বহিয়া বহিয়া স্বর্গীয় সৌরভে চতুর্দ্দিক মোহিত ও আমোদিত করিয়া তুলিল।

 স্বর্গীয় দূতগণ, স্বর্গসংস্রবী দেবগণ, সকলেই আসিয়া উপস্থিত হইলেন। হজরত আদম,—যিনি আদি পুরুষ, যাঁহাকে অবজ্ঞা করিয়া প্রধান ফেরেশতা আজাজীল শয়তানে পরিণত হইয়াছিল, সেই স্বর্গীয় দূতগণ-পূজিত হজরত আদম—হোসেন-শোকে কাতর! স্নেহপরবশে প্রথমেই তাহার সমাগম হইল। পরে মহাপুরুষ মুসা—স্বয়ং ঈশ্বর তুর পর্ব্বতে যাহার সহিত কথা কহিয়াছিলেন; এবং তিনি সেই সচ্চিদানন্দের তেজোময় কান্তি দেখিবার জন্য নিতান্ত উৎসুক হইলে, সেই কান্তির কিঞ্চিৎ আভামাত্র তাহার নয়নগোচর হইয়াছিল, তাহাতেই তিনি স্বীয় শিষ্যগণসহ সে তেজ ধারণে অক্ষম হইয়া তখনই অজ্ঞান অবস্থায় ধরাশায়ী হইয়াছিলেন, তাঁহার শিষ্যগণ পঞ্চত্ব পাইয়াছিল,—আবার করুণাময় জগদীশ্বর, তাহার প্রর্থনায় ঐ শিষ্যগণকে পুনর্জ্জীবিত করিয়া তাহার অন্তরে অটল ভক্তির নব ভাবের আবির্ভাব করিয়াছিলেন—সেই মহামতি সত্য তার্কিক মুসাও আজ হোসেন-শোকে কাতর, কারবালায় সমাসীন। প্রভু সোলেমান—যাঁহার হিতোপদেশ আজও পর্য্যন্ত