পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৭
উদ্ধার পর্ব্ব—চতুর্থ প্রবাহ

দৈহিক সৎকারে প্রবৃত্ত হওয়া যাউক। অগ্রে শহীদগণের মৃতদেহ অন্বেষণ করিয়া সংগ্রহ করিতে হইবে; বিধর্ম্মী, ধর্ম্মী, স্বর্গীয়, নারকীয়, একত্র মিশ্রিত হইয়া সমরাঙ্গণে অঙ্গে অঙ্গ মিশিয়া রহিয়াছে, সেইগুলি বাছিয়া লইতে হইবে। সকলেই শহীদগণের দেহ অন্বেষণে ছুটিলেন।

 ঐ যে শিরশূন্য মহারথী-দেহ ধূলায় পড়িয়া আছে, খরতর তীরাঘাতে অঙ্গে সহস্র সহস্র ছিদ্র দৃষ্ট হইতেছে, পৃষ্ঠে একটি মাত্রও আঘাত নাই, সমুদয় আঘাতই বক্ষ পাতিয়া সহ্য করিয়াছেন, এ কোন বীর? কবচ, কটিবন্ধ, বর্ম্ম, চর্ম্ম, অসি—বীর-সাজের সমুদয় সাজ-সাজওয়া অঙ্গেই শোভা পাইতেছে—বয়সে কেবল নবীন যুবা! কি চমৎকার গঠন্‌! হায়! হায়!! তুমি কি আবদুল ওহাব? হে বীরবর! তোমার মস্তক কি হইল? তুমি কি সেই আবদুল ওহাব—যিনি চির প্রণয়িনী প্রিয়তমা ভার্য্যার মুখখানি একবার দেখিতে বৃদ্ধা মায়ের নিকট অনুনয় বিনয় করিয়াছিলেন, মাতৃ-আজ্ঞা প্রতিপালনে অশ্বপৃষ্ঠে থাকিয়াই যিনি বীররমণী বীরবালার বঙ্কিম আঁখির ভাব দেখিয়া এবং তাহার রণোত্তেজক কথা শুনিয়া অসংখ্য বিধর্ম্মীর প্রাণ বিনাশ করিয়াছিলেন,—তুমি কি সেই আবদুল ওহাব?

 বীরবরের পদ প্রান্তে এ আবার কে? এ বিশাল অক্ষি দুইটি উদ্ধে উঠিয়াও বীরশ্রেষ্ঠ আবদুল ওহাবের সজ্জিত শরীর-শোভা দেখিতেছে। এক বিন্দু জল!—ওহো, এক বিন্দু জলের জন্য আবদুল ওহাব-পত্নী হতপতির পদপ্রান্তে শুষ্ককণ্ঠ হইয়া আত্মবিসর্জ্জন করিয়াছেন। এ বৃদ্ধা রমণী-হৃদয়ে কে আঘাত করিল? এ কোমল শরীরে, কোন্ পাষাণ-হস্ত অস্ত্রাঘাত করিয়া বৃদ্ধ বয়সে তাহার জীবন-লীলা শেষ করিল? রে কাফেরগণ! হোসেনের সহিত শত্রুতা করিয়া রমণী-বধেও পাপ মনে করিস নাই? বীরধর্ম্ম, বীর-নীতি, বীর-শাস্ত্র কি বলে? যে হস্ত রমণীদেহ আঘাত করিতে উত্তোলিত হয়, সে হস্ত বীর-অঙ্গের শোভনীয় নহে, সে বাহু বীর-বাহু বলিয়া গণনীয় নহে। সে বাহু নরাকার পিশাচের বাহু।

 সে বীর-কেশরী, সে বীরকুল-গৌরব, সে মদিনার ভাবী রাজা কোথায়? মহা মহা রথী যাহার অশ্বচালনায়, তীরের লক্ষ্যে, তরবানির