পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৬৮

তেজে, বর্শার ভাঁজে মুগ্ধ,—সে বীরবর কৈ?—সে অমিত-তেজা রণকৌশলী কৈ?—সে নব পরিণয়ের নূতন পাত্র কৈ? এই ত শাহানা বেশ! এই ত বিবাহকালীন জাতিগত পরিচ্ছদ! এই কি সেই—যে সখিনার প্রণয়নুরাগ নব পুষ্পহার পরিণয়সূত্রে গলায় পরিয়াছিল? এই কি সেই কাসেম? হায়! হায়! রুধিরের কি অন্ত নাই!

 সখিনা সমুদয় অঙ্গে, পরিধেয় বসনে রুধির মাখিয়া, বীর-জায়ার পরিচয়-বিবাহের পরিচয় দিয়াছেন; তবু রুধিরের ধারা বহিতেছে, মণিময় বসন-ভূষণ ও তরবারি অঙ্গে শোভা পাইতেছে! তূণীর, তীর বর্শা দেহপার্শ্বে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। বাম পার্শ্বে এ মহাদেবী কে? এ নবকমলদলগঠনা নব যুবতী সতী কে? চক্ষু দুইটি কাসেমের মুখ দেখিতে দেখিতে যেন বন্ধ হইয়াছে, জানিত কি অজানিতভাবে বাম হস্তখানি কাসেমের বক্ষের উপর রহিয়াছে। সতি! তুমি কে? তোমার দক্ষিণ হস্তে এ কি? একি ব্যাপার—কমলকরে লৌহ অস্ত্র! অন্ত্রের অগ্রভাগ কৈ? উহু! কি মর্ম্মঘাতী দৃশ্য! বদ্ধমুষ্টিতে অস্ত্র ধরিয়া হৃদয়কন্দরে প্রবেশ করাইয়াছ! তুমি কি সখিনা? তাহা না হইলে এত দুঃখ কার? স্বামীর বিরহ বেদনায় কাতর হইয়া আত্মবিসর্জ্জন করিয়াছ? না—না—বীর-জায়া, বীর-দুহিতা কি কখনও স্বামী-বিরহে, কি বিয়োগে আত্মবিসর্জন করে? কি ভ্রম! তাহা হইলে এ বদনে হাসির আভা কেন থাকিবে? জ্যোতির্ম্ময় কমলাননে জ্বলন্ত প্রদীপ-প্রভা কেন রহিবে? বুঝিলাম—বিরহ কি বিয়োগ-দুঃখে এ তীক্ষ্ণ খঞ্জরের হৃদয়-শোণিত, স্বামীদেহবিনির্গত শোণিতে মিশ্রিত হয় নাই, স্বামী-বিয়োগে অধীর হইয়া দুঃভার হ্রাস করিতে খঞ্জরের আশ্রয় গ্রহণ করা হয় নাই। ধন্য সতী, ধন্য সতী সখিনা! তুমি জগতে ধন্য, তোমার সুকীর্তি জগতে অদ্বিতীয় কীর্তি! কি মধুময় কথা বলিয়া খঞ্জর হস্তে করিয়াছিলে, জগৎ দেখুক! জগতের নরনারীকুল তোমায় দেখুক! এত প্রণয়, এত ভালবাসা, এত মমতা, এত স্নেহ। এক শোণিতে গঠিত যে কাসেম, সেই-ই আবার নব প্রেমে দীক্ষিত—যে ঘটনায় নিতান্ত অপরিচিত হইলেও মুহূর্তমধ্যে প্রণয়ের প্রেমের সঞ্চার হয়,—