সতীত্ব ধন রক্ষা করিতে সেই কাসেমকেই তুমি মুক্তকণ্ঠে বলিলে, “ভুলিলাম কাসেম! এখন তোমায় ভুলিলাম!” এই চিরস্মরণীয় মহামূল্য কথা বলিয়া যাহা করিলে তাহাতে অপরের কথা দূরে থাকুক,—নির্দয় হৃদয় মারওয়ানের অন্তরেও দয়ার সঞ্চার হইয়াছিল। ধন্য ধন্য সখিনা! সহস্র ধন্যবাদ তোমাকে!
এ প্রান্তরে এ রূপরাশি কাহার? এ অমূলারত্ন ধরাসনে কেন? ঈশ্বর! তুমি কি না করিতে পার? একাধারে এত রূপ প্রদান করিয়া শেষে কি ভ্রম হইয়াছিল? সেই আজানুলম্বিত বাহু,—সেই বিস্তারিত বক্ষঃ—সেই আকর্ণ বিস্তারিত অক্ষিদ্বয়,—কি চমৎকার যুগল,—ঈষৎ গোঁফের রেখা! হায়! হায় ভগবান। এত রূপবান করিয়া কি শেষে তোমারই ঈর্ষা হইয়াছিল? তাহাতেই কি এই কিশোর বয়সে আলী আকবর আজ চির-ধরাশায়ী?
এ যুগলমুর্ত্তি এ স্থানে পড়িয়া কেন? এ ননীর পুতুল রক্তমাখা অঙ্গে মহাপ্রান্তরে পড়িয়া কেন? বুঝিলাম, ইহাও এজিদের কার্য্য। রে পাষণ্ড পিশাচ! হোসেনের ক্রীড়ার পুত্তলি দুইটিও ভগ্ন করিয়াছিল? হায়! হায়!! এই ত সেই ফোরাত নদী, ইহার ভয়ানক প্রবাহ মৃত শরীর সকল স্রোতে ভাসাইয়া লইয়া যাইতেছে। নদীগর্ভে স্থানে স্থানে লোহিত, স্থানে স্থানে কিঞ্চিৎ লোহিত, কোন স্থানে ঘোর পীত, কোন স্থানে নীল-বর্ণের আভা-সংযুক্ত স্রোত বহিয়া নিদারুণ শোক প্রকাশ করিতেছে,—হোসেন-শোকে ফোরাতের প্রতি তরঙ্গ মস্তক নত করিয়া রঞ্জিত জলে মিশিয়া যাইতেছে।
শব্দ হইল, “এ যে আমার কোমরবন্ধ, এ যে আমার শিরস্ত্রাণ, এ যে আমারই তরবারি, এ সকল এখানে পড়িয়া কেন?” আবার শব্দ হইল, “এ সকলই হোসেনের আয়ত্তাধীনে ছিল।”
এই ত সেই মহাপুরুষ-মদিনার রাজা। তিনি র প্রান্তরে বৃক্ষতলে পড়িয়া কেন? রক্তমাখা খঞ্জর কাহার? এ ত হোসেনর অস্ত্র নহে! অঙ্গের বসন, শিরস্ত্রাণ কবচ স্থানে স্থানে পড়িয়া রহিয়াছে,কারণ কি? এ কি আত্মবিকারের চিহ্ন, না ইচ্ছামৃত্যুর লক্ষণ? তাহাতেই কি এই দশা? বাম হস্তের অর্দ্ধ পরিমাণ খণ্ডিত হইয়াও দুই হস্ত দুই দিকে পড়িয়া যে উপদেশ দিতেছে,