পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৫
উদ্ধার পর্ব—পঞ্চম প্রবাহ

পড়িতে আসিবেন; কিন্তু জয়নাবের কথা শুনিয়া সে অবাক হইল। এদিকেও উপাসনার সময় অতি নিকট। মারওয়ান মনে মনে বলিতে লাগিল। “এ সিংহ-শাবকের নিকট চাতুরী চলিবে না, বল প্রকাশ করিলেও কার্য্য উদ্ধার হইবে না। সালেমা বিবির নিকটে যাইয়া বলি;—তিনি সর্বশ্রেষ্ঠা, বয়সেও প্রবীণা; অবশ্যই ভালমন্দ বিবেচনা করিয়া জয়নালকে সম্মত করাইয়া দিবেন। সকলেই ত একই বন্দীগৃহে রহিয়াছেন!”

 মারওয়ান সালেমা বিবির নিকট যাইয়া বলিল, “আপনাদের কপালের এমনই গুণ যে, ভাল করিতে গেলেও মন্দ হইয়া যায়। আমার ইচ্ছা-যে কোনও প্রকারে যেন এই বিপদ হইতে আপনারা উদ্ধার পান।”

 সালেমা বিবি বলিলেন, “কি প্রকারে ভাল করিতে ইচ্ছা কর?”

 “মহারাজ এজিদ-নামদার আজ্ঞা করিয়াছেন যে, জয়নাল আবেদীনের দ্বারা আজিকার জুম্মার খোৎবা পড়াইয়া তাহাদিগকে কারামুক্ত করিয়া দাও।”

  “ভাল কথা। জয়নাল কৈ? তাহাকে এ কথা বলিয়াছ?”

 “বলিয়াছি এবং তাহার উত্তরও শুনিয়াছি।”

 “সে কি উত্তর করিল? তার বুদ্ধি আছে কি?”

 “বুদ্ধিও খুব আছে, ক্রোধও খুব আছে।”

 “ক্রোধের কথা বলিও না। তাহারা ধর্মের দাস, ধর্ম্মই তাদের জীবন; বোধ হয়, সে ধর্ম্মসংক্রান্ত কোন কথা বলিয়া থাকিবে। ধর্ম্মবিরোধী কথা তাহাদের কর্ণে প্রবেশ না করলে কখনই সে-শরীরে ক্রোধের সঞ্চার হয় না।”

 “মহারাজ আজ্ঞা করিয়াছেনঃ আজ হোসেনের নাম পরিবর্ত্তন করিয়া মক্কা ও মদিনা এইক্ষণে যাহার করতলে, জয়নাল আবেদীন তাঁহারই নামে খোৎবা পাঠ করুক। আমি আজই তাহাদিগকে বন্দীগৃহ হইতে মুক্ত কনিয়া মদিনায় পাঠাইয়া দিব। জয়নাল মদিনার সিংহাসনে বসিয়া রাজত্ব করুক-কিন্তু তাহাকে দামেস্করাজের অধীনে থাকিতে হইবে।”

 “এ কি কথা? বন্দী হইয়া আসিয়াছি বলিয়াই কি তিনি ধর্ম্মের প্রতি হক্ষেপ করিবেন। আমাদের প্রতি তিনি এত অত্যাচার করিতেছেন,