পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৯
উদ্ধার পর্ব্ব—পঞ্চম প্রবাহ

সীমা থাকিবে না। সেই কঠিন সময়ে এই মোহাম্মদ হানিফা যুদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে উদ্ধার করিবে, জয়নাল আবেদীনকে মদিনার সিংহাসনে বসাইবে।” বিবি ফাতেমা পিতৃমুখে এই সকল কথা শুনিয়া মোহাম্মদ হানিফাকে আহ্লা‌দে ক্রোড়ে করিয়া তাহার আপাদমস্তকে চুমা দিয়া আশীর্ব্বাদপূর্ব্বক বলিলেন, “প্রাণাধিক! তুমি আমার পুত্র, তুমি আমার হৃদয়ের ধন, মস্তকের মণি। তোমার দেহস্থ আমার চুম্বিত স্থানে কোনরূপ অস্ত্র প্রবেশ করিবে না! তুমি সর্ব্বদা সর্ব্বজয়ী হইয়া জগতে মহাকীর্ত্তি স্থাপন করিবে। আশীর্ব্বাদ করি, দীর্ঘজীবী হও!” প্রই পর্য্যন্ত বলিয়া সালেমা বিবি কহিলেনঃ যে সময় কারবালা প্রান্তরে যুদ্ধের সূচনা হয়, সেই সময় আমি গোপনে একজন কাসেদকে মোহাম্মদ হানিফার নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত বলিয়া পাঠাইয়াছি। মোহাম্মদ হানিফা শীঘ্রই দামেস্কে আসিয়া আমাদিগকে উদ্ধার করিবে। এই ত শাস্ত্রের কথা, এখন সকলই ঈশ্বরের হাত। আরও একটি কথা,—হোসেন যুদ্ধকালে কি বলিয়া গিয়াছিলেন, মনে হয়? তিনি বলিয়াছিলেন, “তোমরা ভাবিও না, এমন একটি লোক আছে, যদি তাহার কর্ণে এই সকল ঘটনার অণুমাত্রও প্রবেশ করে, তবে ইহার প্রতিশোধ সে অবশ্যই লইবে। সে কে?—সে এই মোহাম্মদ হানিফা।”

 জয়নাল আবেদীন এই পর্যন্ত শুনিয়া আর বিলম্ব করিলেন না। খোৎবা পাঠ করিবেন স্বীকার করিয়া উপাসনার সমুচিত পরিধেয় লইয়া তিনি বহির্গত হইলেন; মারওয়ান সঙ্গে সঙ্গে যাইতে লাগিল। নগরে হুলুস্থুল পড়িয়াছে!—আজ জয়নাল আবেদীন এজিদের নামে খোৎবা পাঠ করিবেন! মারওয়ানের আনন্দের সীমা নাই। আজ এজিদের আশা সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হইবে। জয়নাল উপাসনা মন্দিরে প্রবেশ করিয়া উপাসনাস্তে খোৎবা পাঠ আরম্ভ করিলেন। মোহাম্মদীয়গণের অন্তরে খোৎবার শব্দগুলি সুতীক্ষ ছুরিকার ন্যায় বিদ্ধ হইতে লাগিল। কোন মুখে জয়নাল আবেদীন, মদিনার ইমামের নাম অর্থাৎ, হোসেনের নামের স্থানে এজিদের নাম উচ্চারণ করিবেন? হায়! হায়! এ কি হইল? কিন্তু সময় উপস্থিত হইলে .