পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
২৯৬

যুক্তিসঙ্গত। যদি অলীদের আর সৈন্য না থাকে, তবে অবশ্যই তাহাকে তাহার রচিত ব্যূহ ভঙ্গ করিয়া যুদ্ধার্থে সৈন্য পাঠাইতে হইবে। একজন আম্বাজী সৈন্য যদি দশ জন কাফেরকে নরকে প্রেরণ করিয়া শহীদ হয়, সে-ও সৌভাগ্য!”

 মোহাম্মদ হানিফা গাজী রহ্‌মানের বাক্যে অশ্বগতি রোধ করিলেন। ক্রমে সৈন্যগণও প্রভুকে গমনে ক্ষান্ত দেখিয়া দণ্ডায়মান রহিল।

 গাজী রহ্‌মান বলিলেন, “কে দ্বৈরথ-যুদ্ধপ্রিয়? কার অস্ত্র আগে শত্রুর শোণিতপানে সমুৎসুক?”

 অশ্বারোহী সৈন্যগণ সমস্বরে বলিয়া উঠিল, “আমি অগ্রে আইব।” মোহাম্মদ হানিফা সকলকে ধন্যবাদ দিয়া আশ্বস্ত করিলেন এবং বলিলেন, “প্রথম যুদ্ধ জাফরের!”

 জাফর প্রভুর আদেশে নিষ্কোষিত অসিহস্তে সমরক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া বিপক্ষ সৈন্যকে যুদ্ধে আহ্বান করিলেন। আহ্বানের শব্দ অলীদশিবিরে প্রবেশমাত্র মুহুর্ত্তমধ্যে বায়ুবেগে বিপক্ষদল হইতে একজন সৈন্য আসিয়া বলিতে লাগিল, “ওরে! মদিনা-প্রবেশের আশা এই পরিশুষ্ক বালুকারাশিতে বিসর্জ্জন দিয়া পলায়ন কর্। ওরে! কি সাহসে যুদ্ধ করিতে আসিয়াছিস্? হাসান, হোসেন, কাসেম যখন আমাদের হাতে বিনাশ প্রাপ্ত হইয়াছে, তখন তোরা কোন্ সাহসে তরবারি ধরিয়াছিস্? তোদের সৌভাগ্য-সূর্য কারবালার প্রান্তরে লোহিত বসন পরিয়া ইহকালের জন্য একেবারে অস্তমিত হইয়াছে। এখন তোদের অঙ্গে নীল বসনই শোভা পায়; আর্ত্তনাদ এবং বক্ষে করাঘাত করাই তোদের এখনকার কর্ত্তব্য; রণভেরী বাজাইয়া আবার কি সাধে তরবারি ধরিয়াছিস্? দুঃখসময়ে লোকে যে বুদ্ধিহারা হইয়া আত্মহারা হয় তাহার দৃষ্টান্ত আজ তোরাই দেখাইলি, জগৎ হাসাইলি! পিপীলিকার পালক যে জন্য উঠিয়া থাকে, তাহাই তোদের ভাগ্যে আছে। আর অধিক কি?”

 আম্বাজী বীর বলিলেন, “কথার উত্তর-প্রত্যুত্তরের সময় আমাদের এখন নাই; সময় উত্তীর্ণ হইয়া যাইতেছে। যমদূত অস্থির হইতেছেন; আমার হস্তস্থিত অস্ত্রের প্রতি চাহিয়া আছেন।”