পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৭
উদ্ধার পর্ব্ব—নবম প্রবাহ

 “যমদূত কোথায় রে বর্ব্বর?—দেখ, যমদূত কে?—এই বলিয়াই অসির আঘাত! আঘাতে আঘাত উড়িয়া গেল। এজিদ-সৈন্য লজ্জায় মহালজ্জিত হইল। অশ্ব ফিরাইয়া পুনরায় আঘাত করিবার ইচ্ছায় যেমনি সে তরবারি উত্তোলন করিয়াছে, অমনি তাহার বামস্কন্ধ হইতে দক্ষিণ পার্শ্ব দিয়া জাফরের সুতীক্ষ্ণ অসি চঞ্চল চপলা সদৃশ চাকচিক্য দেখাইয়া চলিয়া গেল। অলীদ জাফরের তরবারির হাত দেখিয়া আশ্চর্য্যান্বিত হইল। এদিকে দ্বিতীয় যোদ্ধা সমরে আগত। সে আর টিঁকিল না,—যে তেজে আগত, সেই তেজেই খণ্ডিত। তৃতীয় সৈন্য উপস্থিত—সে আর তরবারি ধরিল না,— বর্শা ঘুরাইয়া জাফরের প্রতি নিক্ষেপ করিল। জাফর সে আঘাত বর্ম্মে উড়াইয়া পদাঘাতে বিপক্ষকে অশ্ব হইতে মৃত্তিকায় ফেলিয়া বর্শার দ্বারা বিদ্ধ করিলেন। চতুর্থ বীর গদাহস্তে আসিয়া জাফরকে বলিল, “কেবল তরবারি-খেলা আর বর্শা ভাঁজাই শিখিয়াছ, বল ত, ইহাকে কি বলে?” গদা বজ্রবৎ জাফরের মস্তকে পড়িল। জাফর বাম হস্তে বর্ম্ম ধরিয়া গদার আঘাত উড়াইয়া দিলেন। কিন্তু ক্রোধে তাঁহার চক্ষু ঘোর রক্তিমবর্ণ ধারণ করিল। তিনি মহাক্রোধে তরবারি আঘাত করিয়া বলিলেন, “যা কাফের। তোর গদা লইয়া নরকে যা।” উভয় দলের লোকই দেখিল যে, গদাধারী যোদ্ধার শরীর দ্বিখণ্ডিত হইয়া অশ্বের দুই দিকে পড়িয়া গেল।

 ক্রমে দামেস্কের সত্তর জন সেনাকে একা জাফর শমন-সদনে প্রেরণ করিলেন। এখনও ব্যূহ পূর্ব্ববৎ রহিয়াছে। কিন্তু আর কেহই দ্বৈরথযুদ্ধে অগ্রসর হইতেছে না। জাফর চক্রাকারে অশ্ব চালাইতেছেন,—অশ্ব গলদঘর্ম্ম হইয়া ঘন ঘন শ্বাস নিক্ষেপ করিতেছে।

 ওত্‌বে অলীদ মহাক্রোধান্বিত হইয়া বলিল, “একটি লোক সত্তর জনের প্রাণ বিনাশ করিল, আর তোমরা তাহার কিছুই করিতে পারিলে না? দ্বৈরথযুদ্ধ তোমাদের কার্য্য নহে! শত্রুপক্ষের প্রথম ব্যূহের সমুদয় সৈন্যের মস্তক আনয়ন কর।”

 আজ্ঞামাত্র জাফরকে সৈন্যদল ঘিরিয়া ফেলিল। মোহাম্মদ হানিফার আশাও পূর্ণ হইল; গাজী রহ্‌মানকে তিনি বলিলেন,—“এই-ই সময়—এই-ই