পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৯
উদ্ধার পর্ব্ব—দশম প্রবাহ

জ্বলিতেছে, প্রাঙ্গণে, দ্বারে, শাণিত কৃপাণহস্তে প্রহরী দণ্ডায়মান রহিয়াছে। গৃহাভ্যন্তরে মন্ত্রদাতা মারওয়ানসহ এজিদ জাগরিত, সন্ধানী গুপ্তচর সম্মুখে উপস্থিত।

 মারওয়ান আগন্তুক গুপ্তচরকে জিজ্ঞাসা করিল, “কোন্ দিকে যাইতে দেখিলে? আর সন্ধানেই বা কি জানিতে পারিলে?”

 “আমি বিশেষ সন্ধানে জানিয়াছি, তাহারা হানিফার সাহায্যে মদিনায় যাইতেছে।”

 “মোহাম্মদ হানিফা যে মদিনায় গিয়াছে, একথা তোমাকে কে বলিল?”

 “তাঁহাদের মুখেই শুনিলাম। মোহাম্মদ হানিফা প্রথমতঃ কারবালাভিমুখে যাত্রা করেন, পরে কি কারণে কারবালায় না যাইয়া মদিনায় গিয়াছেন,—সে কথা অপ্রকাশ রহিয়াছে।”

 “তবে কি যুদ্ধ বাধিয়াছে?”

 “যুদ্ধ না বাধিলে সাহায্য কিসের?”

 “আচ্ছা, কত পরিমাণ সৈন্য?”

 “অনুমানে নিশ্চিত করিতে পারি নাই; তবে তুরস্ক ও তোগান প্রদেশেরই বিস্তর সৈন্য। এই দুই রাজ্যের ভূপতিদ্বয়ও আছেন।”

 এজিদ বলিলেন, “কি আশ্চর্য্য! ওত্‌বে অলীদ কি করিতেছে? ভিন্ন দেশ হইতে হানিফার সাহায্যে সৈন্য যাইতেছে, সৈন্য-সামন্তের আহারীয় পর্য্যন্ত যাইতেছে, ইহার কি কোন সংবাদ অলীদ প্রাপ্ত হয় নাই? মোহাম্মদ হানিফা স্বয়ং মহাবীর, তাহার উপরও এত সাহায্য! শেষ যাহাই হউক, ঐ সকল সৈন্য যাহাতে মদিনায় যাইতে না পারে তাহার উপায় করিতে হইবে। ঐ সকল সৈন্য ও আহারীয় সামগ্রী যদি মদিনায় না যায়, তাহা হইলেও অনেক লাভ। এমন কোন বীরপুরুষই কি দামেস্ক-রাজধানীতে নাই যে, উপযুক্ত সৈন্য লইয়া এই রাত্রেই উহাদিগকে আক্রমণ করে, আর না হয় উহাদের গমনে বাধা দেয়?”

 সীমার করজোড়ে বলিল, “বাদশাহ্-নামদার! চির আজ্ঞাবহ দাস উপস্থিত, কেবল আজ্ঞার অপেক্ষা। যে হস্তে হোসেন-শির কারবালা-প্রান্তর