পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০১
উদ্ধার পর্ব্ব—একাদশ প্রবাহ

ভ্রাতৃগণের দাদ উদ্ধার করিতে বদ্ধপরিকর হইয়া আমার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধঘোষণা করিবে না, ইহা আমি কখনই বিশ্বাস করিতে পারি না।”

 —“যাহা হউক, মহারাজ! জয়নাল-বধ বিশেষ বিবেচনা-সাক্ষেপ, আগামী কল্য প্রাতে যাহা হয় করিব।”

একাদশ প্রবাহ

 এজিদের গুপ্তচরের অনুসন্ধান যথার্থ। তোগান ও তুরস্কের ভূপতিদ্বয় সসৈন্যে মোহাম্মদ হানিফার সাহায্যে মদিনাভিমুখে যাইতেছেন এবং দিনমণি অস্তাচলে গমন করায় তাঁহারা গমনে ক্ষান্ত দিয়া বিশ্রাম-সুখ অনুভব করিতেছেন। প্রহরিগণ ধনুহস্তে শিবির রক্ষার্থে দণ্ডায়মান। শিবিরের চতুর্দ্দিকে আলোকমালা সজ্জিত। ভূপতিগণ স্ব স্ব নিরূপিত স্থানে অবস্থিত। শিবির-মধ্যে বিশ্রাম, আয়োজন, রন্ধন, কথোপকথন, স্বদেশ-বিদেশের প্রভেদ, জলবায়ুর গুণাগুণ, দ্রব্যাদির মূল্য এবং আচার-ব্যবহারের আলোচনা ইত্যাদি নানা প্রকার কথা ও আলাপের স্রোত চলিতেছে।

 ওদিকে সীমার সসৈন্যে মহাবেগে আসিতেছে। সীমারের মনে আশা অনেক। সে হোসেনের মস্তক দামেস্কে আনিয়া পুরস্কার পাইয়াছে, আবার এই বৃহৎ কার্য্যে কৃতকার্য্য হইতে পারিলে বিশের পুরস্কার লাভ করিবে। মানমর্য্যাদা বৃদ্ধির সহিত পদবৃদ্ধির নিতান্তই সম্ভাবনা। যদি বিপক্ষদলের সহিত দেখা হয়, তবে প্রকাশ্যভাবে যুদ্ধ করিবে, কি নিশাচর নরপিশাচের ন্যায় গুপ্তভাবে আক্রমণ করিবে, এ চিন্তাও তাহার অন্তরে উদয় হইতেছে। সীমার কি করিবে? আজ মহারাজ এজিদের সৈন্যাধ্যক্ষের পরিচয়ে দণ্ডায়মান হইবে, কি দস্যুনামে জগৎ কাঁপাইবে, এ পর্য্যন্ত তাহা মীমাংসা করিতে পারে নাই। যাইতে যাইতে আগন্তুক রাজগণের শিবির, বর্হিদ্বারস্থ আলোকমালা—সীমার দেখিতে পাইল: স্থায়ী গৃহ নহে, চিরস্থায়ী রাজপুরী নহে,—নিশাপযোগী বস্ত্রাবাস মাত্র! তাহারই সম্মুখস্থ আলোকমালার পারিপাট্য দেখিয়া সীমার আশ্চর্য্যান্বিত হইল। যতই অগ্রসর হইতে লাগিল, ততই তাহার নয়নের তৃপ্তি বোধ হইতে