পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু ৩০২
৩০২

লাগিল। শিবিরের চতুষ্পর্শ্বেই প্রহরী—তাহাদের হস্তে তীরধনু। বিশেষ সতর্কতার সহিত প্রহরীরা আপন আপন কার্য্য করিতেছে। সাবধানের মার নাই। সীমারের পথপ্রদর্শক গুপ্তচরদিগের হস্তস্থিত দীপশিখা শিবিররক্ষীদের চক্ষে পড়িবামাত্র তাহারা পরস্পর যেন কোন্ এক কথা বলিয়া শরাসনে বাণ বােজনা করিল। সীমারদলের দক্ষিণ ও বাম-পার্শ্ব দিয়া সমযােগে দুইটি শব্দ বজ্রশব্দে চলিয়া গেল। পাষাণ-হৃদয় সীমারের অঙ্গ শিহরিয়া উঠিল, হৃদয় কাঁপিয়া উঠিল। ক্রমেই সুতীক্ষ বাণ উপর্য্যুপরি সীমার-সৈন্যমধ্যে আসিয়া পড়িতে লাগিল। শিবির মধ্যে সংবাদ রটিয়া গেল যে, দস্যুদল অগ্নি জ্বালিয়া শিবির লুণ্ঠন করিতে আসিয়াছে,—তাহাদের যে প্রকার গতি দেখা যাইতেছে, তাহারা যেন অল্প সময় মধ্যে শিবির আক্রমণ করিবে। সকলেই অস্ত্রশস্ত্রে প্রস্তুত হইলেন। তাঁহারা প্রজ্জ্বলিত আলােকাভায় অস্ত্রের চাকচিক্য, অশ্বের অবয়ব, সৈন্যের সজ্জিত বেশ,—সকলই দেখিতে লাগিলেন, কিন্তু তমােময়ী নিশার প্রতিবন্ধকতায় নিশ্চয়রূপে নির্ণয় করিতে পারিলেন না —দস্যু কি রাজসৈন্য। গুপ্তসন্ধানীরাও সন্ধান করিয়া কিছুই স্থির করিতে পারিল না।—মহা সঙ্কট! সীমারের দুইটি চিন্তার একটি নিস্ফল হইল। দস্যুভাবে আক্রমণ করিতে আর তাহার সাহস হইল না। প্রকাশ্যভাবে আক্রমণ করিবে স্থির করিয়া সীমার রণবাদ্য বাজাইতে আরম্ভ করিল। আর সন্দেহ কি? একজন আগন্তুক-সৈন্যদলের মধ্যে জনৈক দূত পাঠাইয়া সংবাদ-সংগ্রহের অভিমত প্রকাশ করিলেন। ইহাতে কাহারও কাহারও অমত হইল। তাঁহারা বলিলেন, “এই দল প্রথমে দস্যুভাবে, শেষে প্রকাশ্যে রণবাদ্য বাজাইয়া আসিয়াছে, ইহাদিগকে বিশ্বাস নাই। সমপদ্ধতির চিরপ্রচলিত বিধি, এই আগন্তুক শত্রুর নিকট আশা করা যাইতে পারে না। এই দলের অধিনায়ক খ্যাতনামা বীর হইলেও এইক্ষণে তিনি নিতান্ত নীচ প্রবৃত্তির পরিচয় দিয়াছেন, অতএব কখনই উহার নিকট দূত পাঠান কর্ত্তব্য নহে।”

 শিবির প্রায় সমস্ত লােকই দেখিলেন যে, আগন্তুকদল ক্রমে তিন দলে বিভক্ত হইয়া, দক্ষিণ ও বামে দুই দল চলিয়া গেল, এক দল স্থিরভাবে