পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৩
উদ্ধার পর্ব্ব—একাদশ প্রবাহ

যথাস্থানে দণ্ডায়মান রহিল। নিশীথ সময়ে যুদ্ধ কি ভয়ঙ্কর! শিবিরস্থ মন্ত্রীদল মন্ত্রণায় বসিলেন। শেষে সাব্যস্ত হইল, এক্ষণে কেবল আত্মরক্ষা, নিশাবসান হইলে চক্ষে দেখিয়া যাহা বিবেচনা হয় যুক্তি করা হইবে। তবে রক্ষীসৈন্য আত্মরক্ষা ও শত্রুগণের আক্রমণে বাধা জন্মাইতে কেবল তীরধনুতে যাহা করিতে পারে, তাহাই করুক; নিশাবসান না হইলে অন্য কোন প্রকারের অস্ত্র ব্যবহার করা হইবে না। যতক্ষণ প্রভাত-বায়ু বহিয়া না যায়, ততক্ষণ পর্য্যন্ত অবিশ্রান্তভাবে তীর চলিতে থাকুক। ইহারা কে, কেন আমাদের সহিত যুদ্ধ করিতে আসিল, এ পর্য্যন্ত তাহার কোনই সন্ধান পাওয়া যায় নাই। সন্ধান না লইয়া, শত্রুবল না বুঝিয়া আক্রমণ বৃথা। অনিশ্চিত অপরিচিত আগন্তুক শত্রুর সহিত হঠাৎ যুদ্ধ করা শ্রেয়স্কর নহে।

 সীমার-প্রেরিত সৈন্যদল দুই পা হইতে অগ্রসর হইতে হইতে পুনঃ একত্র মিশিয়া অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতিভাবে শিবিরাভিমুখে যাইতে লাগিল। তাহাদের ক্রমেই অগ্রসর, ক্রমেই আক্রমণের উদ্যোগ!

 এ যুদ্ধ দেখে কে? এ বীরগণের প্রশংসা করে কে? সীমারের বাহাদুরীর যশোগান মুক্তকণ্ঠে গায় কে? জাগে নক্ষত্র, জাগে নিশা, জাগে উভয় দলের সৈন্যদল। কিন্তু দেখে কে?

 সীমার-দল এবং তাহার অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি-দল অগ্রসরে ক্ষান্ত হইল; আর পদবিক্ষেপে সাহস করিল না। শিবিয়ের চতুর্দ্দিক হইতে অনবরত তীর আসিতে লাগিল। সীমার-পক্ষীয় বিস্তর সৈন্য তীরাঘাতে হত বা আহত হইয়া ভগ্নোৎসাহ হইয়া পড়িল। উভয় দলই হস্তে নিশাদেবীকে তাড়াইয়া ঊষার প্রতীক্ষা করিতেছে। গগনের চিহ্নিত নক্ষত্রের প্রতিও বার বার তাহাদের চক্ষু পড়িতেছে। দেখিতে দেখিতে শুকতারা দেখা দিল, শিবির-রক্ষীদিগের তীরও তূণীরে উঠিল। কারণ, প্রভাতীয় উপাসনার সময় প্রায় সমাগত। এ সময় অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ। বিপক্ষদল তীর নিক্ষেপে ক্ষান্ত হইলেও সীমার-সৈন্য এক পদ ভূমিও অগ্রসর হইতে সাহস করিল না। সকলেই প্রভাতের প্রতীক্ষায় রহিল।

 শিবিরস্থ মন্ত্রীদল দেখিতেছেন—শিবিরের চতুর্দ্দিকেই বিপক্ষ সৈন্য, নিজেরা