পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩০৪

এক প্রকার বন্দী। এ আগন্তুক শত্রুর হস্ত হইতে পরিত্রাণ না পাইলে মদিনা যাওয়া কঠিন। উভয় দলই উষা-দেবীর প্রতীক্ষায় দণ্ডায়মান। ক্রমে প্রদীপ্ত দীপশিখার তেজ হ্রাস হইতে আরম্ভ হইল-ঘোর অন্ধকারে তরলতা প্রবেশ করিল। দেখিতে দেখিতে প্রভাতবায়ুর সহিত ক্ষণস্থায়ী উষাদেবী ধবল বসনে ঘোমটা টানিয়া পূর্ব্বদিক হইতে রজনী দেবীকে ক্রমে ক্রমে সরাইয়া সরাইয়া দিনমণির আগমন-পথ পরিষ্কার করিয়া দিলেন: উভয় দলই পরস্পরের চক্ষে পড়িল।

 সীমার-পক্ষ হইতে জনৈক অশ্বারোহী সৈন্য দ্রুতবেগে শিবিরের নিকট আসিয়া বলিতে লাগিল, “তোমরা যে উদ্দেশ্যে সেখানে যাইতেছ, ক্ষান্ত হও! যদি প্রাণের আশা থাকে, গমনে ক্ষান্ত হও! আর যাইতে পারিবে না। যদি চক্ষু থাকে, তবে চাহিয়া দেখ, তোমরা মহারাজ এজিদের প্রধান বীর সীমারের কৌশলে এক্ষণে বন্দী। পরের জন্য কেন প্রাণ হারাইবে? তোমাদের সহিত মহারাজ এজিদের কোন প্রকারের বাদ বিসম্বাদ নাই। তোমাদের কোন বিষয়ে অভাব কি অনটন হইয়া থাকে, বল—আমরা পূরণ করিতে বাধ্য আছি। মানে মানে প্রাণ লইয়া স্ব স্ব রাজ্যে গমন কর। মদিনাভিমুখে যাইবার কথা আর মুখে আনিও না। যদি এই সকল কথা অবহেলা করিয়া মদিনাভিমুখে যাইতে কিঞ্চিৎ অগ্রসর হও, তবে জানিও তোমাদের মরণ অতি নিকটে। এখন তোমাদের ভাল-মন্দের ভার তোমাদের হস্তে।”

 শিবিরবাসিদের পক্ষ হইতে কেহ তাহার নিকট আসিল না, কেহ তাহার কথার উত্তর করিল না। কিন্তু তাহার কথা-শেষের সহিত লাখে লাখে ঝাঁকে ঝাঁকে তীরসকল গগন আচ্ছন্ন করিয়া স্বাভাবিক শন্ শন্ শব্দে আসিতে লাগিল। আক্রমণ এবং বাধার আশা অতি অল্প সময় মধ্যেই সীমারের অন্তর হইতে অপসৃত হইয়া গেল। তাহার সৈন্যগণ আর তিষ্ঠিতে পারিল না। কেহ আঘাত সহ্য করিতেছে, কেহ মরিতেছে, কেহ অজ্ঞান হইয়া পড়িতেছে,—রক্ত বমন করিতেছে, কাহারও বক্ষ হইতে রক্তের ধার ছুটিতেছে,—চক্ষু উল্‌টাইয়া পড়িতেছে, কেহ ক্ষত-বিক্ষত হইয়া মহা অস্থির হইয়া