পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৫
উদ্ধার পর্ব্ব—একাদশ প্রবাহ

পড়িতেছে, আবার কেহ বা ধরাশায়ী হইয়া নাকে মুখে শোণিত উদগীরণ করিয়া প্রাণ বিসর্জ্জন দিতেছে।

 সীমারের চাতুরী বুঝিয়া উঠ। বড়ই কঠিন! সে সন্ধির প্রস্তাবে দূত প্রেরণ করিল। শিবিরস্থ সৈন্যগণের সুতীক্ষ্ণ তীর তূণীরে প্রবেশ করিল, ক্ষণকালের জন্য যুদ্ধ স্থগিদ রহিল।

 সীমার-প্রেরিত দূতবরের প্রার্থনা এই যে, “আমরা বহুদূর হইতে আপনাদের অনুসরণে আসিয়া মহাক্লান্ত হইয়াছি। আজিকার মত যুদ্ধ ক্ষান্ত থাকুক,— আগামী প্রভাতে আমরা প্রস্তুত হইব। যদি সেরূপ বিবেচনা হয়, তবে বিনা যুদ্ধে মদিনার পথ ছাড়িয়া দিব। আমরা মহাক্লান্ত।”

 শিবিরস্থ মন্ত্রীদল মধ্যে তুর্কীর মন্ত্রী বলিলেন, “আমরা সম্মত হইলাম, ক্লান্ত শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র উত্তোলন করিলে অস্ত্রের অবমাননা করা হয়। আমরা ক্ষান্ত হইলাম। তোমরা পথশ্রান্তি দূর কর।”

 সীমার-দূত যথাবিধি অভিবাদন করিয়া প্রস্থান করিল।

 সীমার চিন্তায় মগ্ন হইল। অনেকক্ষণ পরে সীমারের কথা ফুটিল— প্রকাশ্য যুদ্ধে পারিব না! কখনই পারিব না!! এই মুখে আমরা টিঁকিতে পারিব না!!! কৌশলে না হয় অর্থে কার্য্যসিদ্ধি হইবে, বাহুবলে আশা বৃথা!!!! সীমার উঠিল, পরিচারকগণকে বলিল, “আমার এই সকল সাজসজ্জা, অস্ত্রশস্ত্র, বেশভূষা রাখিয়া দাও, যদি কখনও অস্ত্র হস্তে লইবার উপযুক্ত হই তবে লইব—নতুবা, এই রাখিলাম। সীমার আর উহা স্পর্শ করিবে না। যুদ্ধসাজ অস্ত্রশস্ত্র আমাদের উপযুক্ত নহে, তুরস্ক ও তোগানের সৈন্যগণই উহার যথার্থ অধিকারী।”