পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৭
উদ্ধার পর্ব্ব—দ্বাদশ প্রবাহ

সে ঘর হইতে বিফলমনোরথ হইয়া সীমার অন্য দ্বারে উপস্থিত। সেখানেও ঐ কথা। তৃতীয় দ্বারে উপস্থিত হইলে প্রহরিগণ কর্কশ বাক্যে বিশেষ অপমানের সহিত তাহাকে তাড়াইয়া দিল। নিরাশ হইয়া চতুর্থ দ্বারে উপস্থিত। সে দ্বারের প্রহরিগণ নিজেদের মধ্যে নানা প্রকার কথার তরঙ্গ উঠাইয়া আলাপে মন দিয়াছিল। সীমার ঈশ্বরের নাম করিয়া দণ্ডায়মান হইতেই প্রহরিগণ তাহাকে তাড়াইয়া দিতে অগ্রসর হইল। কিন্তু কোন মহামতি অধ্যক্ষ বারণ করিলেন এবং বলিলেন, “ফকির কি চাহে জিজ্ঞাসা কর।”

 এ দ্বার তুর্কীদিগের তত্ত্বাবধানে। জিজ্ঞাসিত হইয়া সীমার ঈশ্বরের নাম করিয়া বলিল, “আমি সংসারত্যাগী ফকির। আমার কোন আশা নাই, কিছুই চাহি না। আপনারা কে কোথা হইতে আসিয়াছেন, কোথায় যাইবেন—জানিতে বাসনা, আর অন্য কোনরূপ আশা আমার নাই।”

 সৈন্যাধ্যক্ষ বলিলেন, “আপনি মহাধার্ম্মিক। আশীর্ব্বাদ করুন, আমরা যে উদ্দেশ্যে আসিয়াছি তাহাতে কৃতকার্য্য হইয়া হাসিমুখে যেন স্বদেশে ফিরিয়া যাই,—এই মাত্র বলিলাম। আর কোন কথা বলিব না, তবে আপনি অনুমানে যতদূর বুঝিতে পারেন।”

 “আমি অনুমানে কি বুঝিব, আমি ত অন্তর্য্যামী নহি।”

 “হজরত! কি করিব। প্রভুর আদেশ অগ্রে প্রতিপাল্য, ইহা আপনি জানেন।”

 “তাহা জানি, কিন্তু যাহারা কাপুরুষ, তাহারাই নিজ মন্তব্য প্রকাশে সঙ্কুচিত।”

 “আপনি যাহাই বলুন না কেন, আমি আর কিছুই বলিব না, এ সম্বন্ধে আপনার কথার আর কোন উত্তর করি না, অন্য আলাপ করুন।”

 “অন্য আলাপ কি করিব? ঈশ্বরের নিয়োজিত কার্য্যে কেহ বাধা দিতে পারে না।”

 “সে কথা সত্য, কিন্তু প্রভুর আজ্ঞা অবহেলা করাও মহাপাপ।”

 “আমি কয়েকটি কথা জিজ্ঞাসা করিব মাত্র; ইচ্ছা হয় বলিবেন, না