পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩০৮

হয় বলিবেন না; আর আমি ইহাও বলি, যদি আমার দ্বারা আপনাদের কোন সাহায্য হয়—আমি প্রস্তুত আছি। পরোপকার করিতে করিতেই জীবন শেষ করিয়াছি। ঈশ্বরভক্ত মাত্রেরই আমি ভক্ত। তাঁহাদের সামান্য উপকার করিতে পারিলেও কিঞ্চিৎ সুখী হইব। পরোপকার-পরকার্য্য করাই আমার স্বভাব এবং ধর্ম্ম। মানবজীবনের উদ্দেশ্য কি? পরোপকারের ন্যায় পুণ্য আর কি আছে? ভাবিতে পারেন: আমি পথের ভিখারী—এক মুষ্টি অন্নের জন্য সর্ব্বদা লালায়িত। কিন্তু সে ভাব অজ্ঞ লোকের হৃদয়ে উদয় হওয়াই সম্ভব। আপনার ন্যায় মহান্ হৃদয়ে কি সে ভাবের আবির্ভাব হইতে পারে?”

 —“তবে আপনি কিছু বলিবেন, আমার দ্বারাও কিছু বলাইবেন?”

 —“আপনি কিছু বলুন আর না বলুন, আমি দুই একটি কথা বলিব।”

 —“বলুন আপনার কথা।”

 —“এখানে বলিব না।”

 —“তবে কি গোপনে বলিবেন?”

 —“ইচ্ছা ত তাহাই। আমার মঙ্গলের জন্য আমি ভাবি না, চিন্তাও করি না। পরহিতসাধনই আমার কর্ত্তব্য কার্য্য, নিত্য নিয়মিত ব্রত।

 —“আচ্ছা চলুন, আমিই আপনার সঙ্গে যাইতেছি।”

 মহামতি সৈন্যাধক্ষ যাইবার সময় সঙ্গীদিগকে সঙ্কেতে বলিয়া গেলেন, “আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখিও। আমরা ঐ বৃক্ষের আড়ালে কথাবার্ত্তা কহিব। তোমরা আমাদের অদৃশ্যভাবে বিশেষ সতর্কে সজ্জিতভাবে দূরে থাকিবে।”

 সৈন্যাধ্যক্ষ সীমারের পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। তাঁহারা পূর্ব্বকথিত বৃক্ষের আড়ালে দণ্ডায়মান হইয়া কথাবার্ত্তা কহিতে লাগিলেন; কিন্তু কথাগুলি বড়ই মৃদু মৃদু ভাবে চলিল; অপরের শুনিবার ক্ষমতা রহিল না। হস্ত-চালনা, মুখভঙ্গী, মস্তক-হেলন, হাঁ—না, মোহাম্মদ হানিফা, এজিদ মহারাজ, অসংখ্য ধন, লাভের জন্য চাকুরী,—আত্মীয় নয়,—ভ্রাতা নয়—লাভ কি—