পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
১৬

পক্ষে কঠিন হইয়া উঠিবে। কাজেই সকলের নিকট হাস্যাস্পদ হওয়ারই সম্ভাবনা। আমার ইচ্ছা যে, তোমাকে নিশ্চিতভাবে রাজপরিবারের মধ্যে রাখিয়া দিই।”

 করজোড়ে আবদুল জব্বার বলিলেন, “আমি দাসানুদাস, আজ্ঞাবহ ভৃত্য; যাহা আদেশ করিবেন, শিরোধার্য্য করিয়া প্রতিপালন করি। আমার নিতান্ত সৌভাগ্য যে, আমি আমার আশার অতিরিক্ত আদৃত হইয়া রাজসমীপে উপবেশনের স্থান পাইয়াছি।”

 মাবিয়া বলিলেন, “আবদুল জব্বার। আমার মনোগত অভিপ্রায় প্রধান উজীর মারওয়ানের মুখে শ্রবণ করিয়া তোমার প্রতিজ্ঞা প্রতিপালন কর। আমার উপাসনার সময় অতীতপ্রায়, আমি আজিকার মত বিদায় লইলাম।”

 এই বলিয়াই মাবিয়া খোশমহল হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন। মন্ত্রী মারওয়ান বাদশাহের প্রতিনিধিস্বরূপ বলিতে লাগিলেন, “মাননীয় আবদুল জব্বার সাহেব! আমাদের ইচ্ছা যে, রাজসংসার হইতে আপনার নিত্য-নিয়মিত রাজোচিত ব্যয়োপযোগী সম্পত্তি প্রদানপূর্ব্বক অদ্বিতীয় রূপযৌবনসম্পন্ন, বহুগুণবতী, নিষ্কলঙ্কচন্দ্রাননা, মহামাননীয়া রাজকুমারী সালেহার সহিত শাস্ত্রসঙ্গত পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ করিয়া এই দামেস্ক নগরে আপনাকে স্থায়ী করি। ইহাতে আপনার মত কি?”

 কর্ণে এই কথা প্রবেশ করিবামাত্র আবদুল জব্বার মনের আনন্দে বিভ্রান্ত হইয়া কিছুই উত্তর করিতে পারিলেন না। এজিদের ভগ্নী সালেহার পাণিগ্রহণ করিবেন, স্বাধীনভাবে ব্যয়বিধানের জন্য সম্পত্তি প্রাপ্ত হইবেন, ইহা অপেক্ষা সুখের বিষয় আর কি আছে? জীবনে যাহা তিনি আশা করেন নাই, স্বপ্ন যে অমূলক চিন্তা, সে স্বপ্নেও কোন দিন যাহা উপদেশ পান নাই, অভাবনীয়রূপে আজ তাহাই তঁহার ভাগ্যে ঘটিল! ঈশ্বর সকলই করিতে পারেন। মন্ত্রিমুখে এই বাক্য শ্রবণ করিয়া আবদুল জব্বার যেন ক্ষণকালের জন্য আত্মহারা হইলেন; তখনই সম্মতিসূচক অভিপ্রায় জানাইতেন, কিন্তু হর্ষবিহ্বলতা আশু তাঁহার বাক্‌শক্তি হরণ করিল। ক্ষণকাল পরে বলিলেন, “মন্ত্রিবর। আমার পরম সৌভাগ্য। রাজাদেশ শিরোধার্য্য।”