পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ত্রয়োদশ প্রবাহ

 কে জানে, কাহার মনে কি আছে? এই অস্থি, চর্ম্ম, মাংসপেশীজড়িত দেহের অন্তরস্থ হৃদয়খণ্ডে কি আছে—তা কে জানে? ভূপালদ্বয় শিবিরমধ্যে শয়ন করিয়া আছেন—রজনী ঘোর অন্ধকার, শিবিরস্থ প্রহরিগণ জাগরিত,—হঠাৎ চতুর্থ দ্বারে মহা কোলাহল উত্থিত হইল। ঘোর আর্ত্তনাদ, ‘মার’ ‘ধর’ ‘কাট’ ‘জ্বালাও’ ইত্যাদি রব উঠিল। যাহারা জাগিয়াছিল; যাহারা ঐ সকল শব্দ ও গোলযোগের প্রতীক্ষায় ছিল, তাহারা ঘোর নিদ্রার ভাণেই পড়িয়া রহিল। যাহারা যথার্থ নিদ্রায় অচেতন ছিল, তাহারা ব্যস্তসমস্তে জাগিয়া উঠিল, তাহাদের অন্তরাত্মা কাঁপিতে লাগিল;—কোথায় অস্ত্র, কোথায় অশ্ব, কিছুই স্থির করিতে পারিল না! দেখিতে দেখিতে অসংখ্য অগ্নিশিখা সহস্র প্রকারে ধূম উদ্গীরণ করিতে করিতে ঊর্দ্ধে উঠিতে লাগিল। মহাবিপদ! কার কথা কে শুনে, কেই বা ভূপতির অন্বেষণ করে!

 ভূপতিদ্বয়ের মধ্যে যিনি সৈন্যগণের কোলাহলে, অগ্নির দাহিকা শক্তির আরবে জাগরিত হইয়াছিলেন, তিনি যাহা দেখিলেন, তাহাতে নিশ্চয়ই মরণ জানিয়া মনে মনে ঈশ্বরের নিকট আত্মসমর্পণ করিলেন। স্পষ্টভাবে ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করিবার শক্তি তাঁহাদের নাই—কঠিনভাবে বস্ত্রে মুখ বন্ধ; শয্যা হইতে উঠিবার শক্তি নাই—হস্ত-পদ কঠিন বন্ধনে আবদ্ধ। যাহারা বাঁধিল, তাহারা সকলেই পরিচিত, কেবল দুই একটি মাত্র অপরিচিত। তাঁহারা কি করিবেন? কোন উপায় নাই। মহা মহা বীর হইয়াও হস্তপদ বন্ধন অবস্থায় তাঁহাদের কোনই ক্ষমতা নাই। দেখিতে দেখিতে তাহারা ভূপালদ্বয়ের চক্ষুদ্বয়ও বস্ত্রে আবৃত করিয়া ফেলিল, ক্রমে তাঁহাদিগকে শষ্যা হইতে শূন্যে তুলিয়া কোথায় লইয়া চলিল।

 শিবির মধ্যে যাহারা যথার্থ নিদ্রিত ছিল, তাহারা অনেকেই জ্বলিয়া