উষ্ট্রপৃষ্ঠে নকিব উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করিয়া যাইতেছে, “ইরাকের অধিপতি মস্হাব কাক্কা, হজরত মোহাম্মদ হানিফার সাহায্যে মদিনায় যাইতেছেন। যদি গমনে বাধা দিতে কাহারও ইচ্ছা থাকে, সম্মুখ সমরে দণ্ডায়মান হও। না হয়, পরাজয় স্বীকারপূর্ব্বক পথ ছাড়িয়া প্রাণরক্ষা কর।”
এই সকল কথা সীমারের কর্ণে বিষসংযুক্ত তীরের ন্যায় বিঁধিতে লাগিল; তোগানের সৈন্যমধ্যে যাহারা নিশীথ সময়ে জ্বলন্ত অনল হইতে প্রাণ বাঁচাইয়া সীমারের ভয়ে জঙ্গলে লুকাইয়াছিল, তাহারা ঐ মধুমাখা রব শুনিয়া মহোল্লাসে মস্হাব কাক্কার নিকটে আসিয়া বলিতে লাগিল, “বাদশাহ্-নামদার! আমাদের দুর্দ্দশার কথা শুনুন,আমাদের দুর্দ্দশার কথা শুনুন!!”
সৈন্যগণ গমনে ক্ষান্ত দিয়া দণ্ডায়মান রহিল। ইরাক-অধিপতি সৈন্যগণের সম্মুখে শ্রেণীভেদ করিয়া বিবরণ জিজ্ঞাসা করিলে, ভুক্তভোগী সৈন্যগণ তাঁহার সম্মুখে রাত্রির সমুদয় ঘটনা বিবৃত করিল। তাহারা আরও বলিল, “বাদশাহ্-নামদার। ঐ যে জ্বলন্ত হুতাশন দেখিতেছেন—উহাই শিবিরের ভগ্নাবশেষ; এখনও পর্য্যন্ত খাকে পরিণত হয় নাই! কত সৈন্য়, কত আহারীয় দ্রব্য, কত অর্থ, কত বীর যে, ঐ মহা-অগ্নির উদরস্থ হইয়াছে, তাহার অন্ত নাই। তোগান ও তুরস্কের ভূপতিদ্বয় মোহাম্মদ হানিফার সাহায্যের জন্য মদিনায় যাইতেছেন; এজিদ-সেনাপতি সীমার রাত্রে দস্যুতা করিয়া মহা অনর্থ ঘটাইয়া, ভূপতিদ্বয়কে বন্দী করিয়া ঐ শিবিরে লইয়া গিয়াছে, এখনই দামেস্কে লইয়া যাইবে। গতকল প্রাতঃকাল হইতে দিবা দ্বিপ্রহর পর্য্যন্ত আমরা কেবল তীর-ধনুর লড়াই করিয়াছিলাম। বিপক্ষদিগকে এক পদও অগ্রসর হইতে দিই নাই। শেষে তাহারা সন্ধির প্রস্তাব করিয়া ঐ দিনের যুদ্ধ বন্ধ রাখিল। তাহার পর রাত্রে এই ঘটনা। সীমার ভয়ানক চতুর। বাদশাহ্-নামদার! মিথ্যা সন্ধির ভাণ করিয়া শেষে সে এই সর্ব্বনাশ করিয়াছে।”
মস্হাব বলিলেন, “তোমরা বলিতে পার, এ কোন্ সীমার?”