“বাদশাহ্-নামদার। গতকল্য ইহার পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। এই সীমারই স্বহস্তে ইমাম হোসেনের শির খঞ্জর দ্বারা খণ্ডিত করিয়াছিল। এই সীমারই ইমাম হোসেনের বুকের উপর বসিয়া দুই হাতে খঞ্জর চালাইয়া ‘মহাবীর’ নামে খ্যাত হইয়াছে, লক্ষ টাকা পুরস্কারও পাইয়াছে। সে পাষাণপ্রাণ না হইলে এত লোককে আগুনে পোড়াইয়া মারিতে পারিত কি?”
ইরাক-ভূপতি চক্ষু আরক্তবর্ণ করিয়া বলিলেন—“উঁহু! তুমি সেই সীমার! হায়! তুমি সেই!!” এই কথা বলিয়া তিনি অশ্ব ফিরাইলেন। সৈন্যগণও প্রভুর পশ্চাৎ পশ্চাৎ অশ্ব ছুটাইল। অশ্ব-পদনিক্ষিপ্ত ধূলারাশিতে চতুষ্পার্শ অন্ধকার হইয়া গেল। প্রবল ঝঞ্ঝাবাতের ন্যায় মস্হাব কাক্কা সীমার-শিবির আক্রমণ করিলেন। অশ্বের দাপট, অস্ত্রের চাকচিক্য দেখিয়া সীমার চতুর্দ্দিকে অন্ধকার দেখিতে লাগিল। আজ নিস্তার নাই। কাক্কা স্বয়ং অসি ধরিয়াছেন, রক্ষা নাই!
মস্হাব বলিতে লাগিলেন, “সীমার! আমি তোমাকে বাল্যকাল হইতেই চিনি, তুমিও আমাকে সেই সময় হইতেই বিশেষরূপে জান। আর বিলম্ব কেন? আইস, দেখি তোমার দক্ষিণ হস্তে কত বল? (ক্রোধে অধীর হইয়া) আয় পামর! দেখি তোর খঞ্জরের কত তেজ।”
সীমার মস্হাব কাক্কার বলবিক্রম পূর্ব্ব হইতেই অবগত ছিল। তাহার সহিত সম্মুখ সমরাশা দূরে থাকুক, ভয়ে সে কাঁপিতে লাগিল—কি বলিবে, কাহাকে কি আজ্ঞা করিবে, কিছুই স্থির করিতে পারিল না।
মস্হাব কাকা সৈন্যগণকে বলিলেন, “সেই সীমার! এ সেই সীমার। ইহার মস্তক দেহ-বিচ্ছিন্ন করিতে আমার জীবন-পণ। এ সেই পাপিষ্ঠ, এ সেই নরাধম সীমার! আইস, আমার সঙ্গে আইস, বিষম বিক্রমে চতুর্দ্দিক হইতে পামরের শিবির আক্রমণ করি। কাক্কা অশ্বে কশাঘাত করিতেই অশ্বারোহী সৈন্যগণ ঘোর নিনাদে সিংহবিক্রমে সীমার শিবিরোপরি যাইয়া পড়িল। আজ সীমারের মহাসঙ্কট উপস্থিত। আত্মরক্ষার অনেক উপায় সে উদ্ভাবন করিল, কিন্তু কিছুতেই কিছু হইল না, কিছুই কার্য্যে আসিল না। সে পরাভব স্বীকারের চিহ্ন দেখাইল, কোন ফলই হইল না;