পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৭
উদ্ধার পর্ব্ব—ত্রয়ােদশ প্রবাহ

মুখে উচ্চারণ করিয়া বিপক্ষদল-সম্মুখে দণ্ডায়মান হইল এবং তরবারি প্রভৃতি সমুদয় অস্ত্র তাঁহাদের সম্মুখে রাখিয়া দিয়া আত্মসর্পণ করিল। মহাবীর মস্‌হাব তাহাদিগকে অভয়দানে আশ্বস্ত করিয়া সাদরে গ্রহণ করিলেন, কিন্তু তাহাদের সঙ্গে অস্ত্র লইতে দিলেন না।

 সীমার অর্থ-লোভ দেখাইয়া, পদোন্নতির আশা দিয়া, অর্থে বশীভূত করিয়া যে সকল সৈন্য ও সৈনাধ্যক্ষকে নিজ শিবিরে আনাইয়াছিল, তাহারা বলিতে লাগিল, “আমরা যে ব্যবহার করিয়াছি, সীমারের কূহকে পড়িয়া যে কুকাণ্ড করিয়াছি, ইহার প্রতিফল অবশ্যই আমাদিগকে পাইতে হইবে। কি ভ্রমে পড়িয়া এই কুকার্য্যে যোগ দিয়াছিলাম। এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত না হইয়া যায় না, হওয়াই উচিত। কিন্তু এখন কথা এই যে, সেনাপতি মহাশয় নিজ সৈন্যদিগকে বশে রাখিতে যখন অক্ষম, তখন আমাদের দশা কি হইবে? অতি অল্প সময় মধ্যেই আমরা কাক্কার হস্তে ধরা পড়িব। কোনও দিক হইতেই আর জীবনের আশা নাই। এ অবস্থায় আর বিলম্ব করা উচিত নহে। কোনও দিক হইতেই আমাদের জীবনের আশা নাই। আর বিলম্ব করিব না। ভাইসকল! যত সত্বর হয়, এস সকলে মহাবীর মস হাব কাক্কার হস্তে আত্মসর্পণ করি। কিন্তু সেনাপতি মহাশয়কে রাখিয়া যাইব না। শেষে ভবিতব্যে যাহা থাকে হইবে। আমরা বিখ্যাত যোদ্ধা, আমাদের এ কলঙ্ক-কালিমা-রেখা, জগতে চিরকাল সমভাবে আঁকা থাকিবে। মনে হইলেই লোকে বলিবে: তুর্কী সৈন্ত্যের সৈন্যাধ্যক্ষ অর্থলোভে বিশ্বাসঘাতকতার কার্য্য করিয়া সর্ব্বনাশ করিয়াছে। ভাইসকল। তাহাতেই বলি, কথার শেষে আর একটি কথা সংলগ্ন করিয়া রাখিয়াই যাই;—সীমার! সীমার!! সীমার!!”

 সীমার-শিবির মধ্য হইতে ঘোররবে—“জয় ইরাক অধিপতি! জয় মোহাম্মদ হানিফা” রব উখিত হইতে লাগিল। মুহূর্ত্তমধ্যে তাহারা সীমারকে হস্তপদে বন্ধন করিয়া রণপ্রাঙ্গণে মস্‌হাব কাক্কার সম্মুখে রাখিয়া করজোড়ে বলিতে লাগিল, “আমরা অপরাধী, দণ্ডবিধান করুন। বাদশাহ্-নামদার! সেনাপতি মহাশয়কে বাঁধিয়া আনিয়াছি, গ্রহণ করুন।”

 মস্‌হাব কাক্কা প্রথমে ইহা সীমারের চাতুগী মনে করিয়া দ্রুত অসিচালনে