পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩১৮

প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন; পরে আমূল বৃত্তান্ত শুনিয়া বলিলেন, “সৈন্যগণ! তোমরাই বাহাদুর! তোমরাই সীমারের রক্ষক, তোমরাই সীমারকে বন্দীভাবে লইয়া আমার সহিত মদিনায় চল। মোহাম্মদ হানিফার সম্মুখে তোমাদের এবং সীমারের বিচার হইবে।”

 এদিকে কাক্কা সৈন্যগণকে গোপনে আজ্ঞা করিলেন, “বিদ্রোহী সৈন্য ও সীমারকে কৌশলে মদিনায় লইয়া যাইতে হইবে। সাবধান! উহাদের একটি প্রাণীও যেন হাতছাড়া না হয়। বিশেষতঃ, সীমার বড় ধূর্ত্ত।” এই আদেশ করিয়া মস্‌হাব কাক্কা মদিনাভিমুখে যাত্রা করিলেন।

 জগদীশ! তোমার মহিমার অন্ত নাই। কাল কি করিলে?—আবার রাত্রে কি ঘটাইলে!—প্রভাতেই বা কি দেখাইলে!—আবার এখনই বা কি কৌশল খাটাইয়া কি খেলা খেলাইলে! ধন্য তোমার মহিমা! ধন্য তোমার কারিগিরি! যে ফণীর দ্বারা দংশন করাইলে, সেই বিষধর ফণীর বিষেই ঔষধ তৈরী করিয়া নির্ব্বিষ করিয়া দিলে! ধন্য তোমার মহিমা। ধন্য তোমার লীলা!

 যাও সীমার, মদিনায় যাও। তোমার বাক্য আজ সফল হইল। আর ও-হাতে লৌহ-অস্ত্র ধরিতে হইবে না। যাও, মদিনায় যাও। মদিনায় গিয়া তোমার কৃতকার্য্যের ফলভোগ কর। সেখানে অনেক দেখিবে।—সে প্রান্তরে অনেক দেখিতে পাইবে। তোমার প্রাণপ্রতিম প্রিয়সখা ওত্‌বে অলীদকে দেখিতে পাইবে। অশ্ব, শিবির, অস্ত্র, যুদ্ধ, যোদ্ধা, সমরাঙ্গণ— সকলই দেখিতে পাইবে; কিন্তু তুমি পরহস্তে থাকিবে। সীমার! একবার মনে করিও সীমার!! ফোরাতকূলের ঘটনা একবার মনে করিও। আজরের কথা মনে করিও। তুমি জগৎ কাঁদাইয়াছ,—বন, উপবন, পর্ব্বত, গিরিগুহা, গগন, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য্য বায়ু ভেদ করিয়া চতুর্দ্দিক হইতে যে হৃদয়বিদারক শব্দ উত্তোলন করাইয়াছ, সে কথাটাও একবার মনে করিও। এই ত সে দিনের কথা। হাতে হাতেই এই ফল!—ইহাতে আর আশা কি? এই নশ্বর জীবনে, এই অস্থায়ী জগতে আর আশা কি, সীমার? প্রাতে তোমার মনে যে ভাবনা ছিল, এইক্ষণে তাহার কি কিছু আছে? বল মানুষের সাধ্য