পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৯
উদ্ধার পর্ব্ব—চতুর্দ্দশ প্রবাহ

কি? বাহুবল, অর্থবল লইয়া মূর্খেরাই দর্প করে। তুমি না দামেস্কের অভিমুখে মহা হর্ষে যাত্রা করিয়াছিলে?—সুসময়ে যাত্রার চিহ্নম্বরূপ কত পতাকাই না উড়াইয়াছিলে?—কত বাজনাই না বাজাইয়াছিলে? দেখ দেখি, মুহূর্ত্ত মধ্যে কি ঘটিয়া গেল! ভবিষ্যৎ-গর্ভে যে কি নিহিত আছে, তাহা জানিবার কাহারও সাধ্য নাই। যাও সীমার, মদিনায় যাও, তোমার কৃতকার্য্যের ফল ভোগ কর।

চতুর্দ্দশ প্রবাহ

 হায়! হায়!! এ আবার কি? এ দৃশ্য কেন চক্ষে পড়িল। উহু! কি ভয়ানক ব্যাপার! উহু! কি নিদারুণ কথা! এ প্রবাহ না লিখিলে কি “উদ্ধার পর্ব্ব” অসম্পূর্ণ থাকিত, না বিষাদ-সিন্ধুর কোন তরঙ্গের হীনতা জন্মিত? বুদ্ধি নাই, তাই সীমারের বন্ধনে মনে মনে একটু সুখী হইয়াছিলাম। কিন্তু এখন যে প্রাণ যায়! এ বিষাদ-প্রবাহে এখন যে প্রাণ যায়! হায়! হায়! হায়!! এ সিন্ধুমধ্যে কি মহা-শোকের কল্লোলধ্বনি ভিন্ন আনন্দ-হিল্লোলের সামান্য ভাবও থাকিবে না! হায় রে কৃপাণ! আবরণবিহীন কৃপাণ!! এজিদের হস্তের কৃপাণ!!! সম্মুখে মদিনার ভাবী রাজা ঊর্দ্ধদৃষ্টিতে দণ্ডায়মান। তিন পার্শ্বে সজ্জিত প্রহরী—এক পার্শ্বে প্রহরী নাই। হাসনেবানু, শাহ্‌রেবানু, জয়নাব প্রভৃতির দৃষ্টির বাধা না জন্মে—জয়নালের শিরশ্ছেদন স্বচ্ছন্দে যাহাতে তাহাদের চক্ষে পড়ে, সেই উদ্দেশ্যেই বন্দীগৃহের সম্মুখে বধ্যভূমি, এবং সেই দিক প্রহরীশূন্য! সন্তানের মস্তক কি প্রকারে ধরায় লুষ্ঠিত হয়, তাহাই মাকে দেখাইবার জন্য সে দিক প্রহরীশূন্য! এজিদ অসিহস্তে জয়নালের সম্মুখে দণ্ডায়মান। মারওয়ান নীরব, পুরবাসিগণ নীরব, দর্শকগণ ম্লানমুখে নীরব! এ ঘটনা কেহ ইচ্ছা করিয়া দেখিতে আসে নাই। প্রহরিগণ বলপূর্ব্বক নগরবাসিগণকে ধরিয়া আনিয়াছে।

 এজিদের আজ্ঞায় যে সময় জয়নাল আবেদীনকে বন্দীগৃহ হইতে বলপূর্ব্বক আনা হইয়াছে, সেই সময় হাসনেবানু অচৈতন্য হইয়াছেন, তাঁহার চক্ষু আর