পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২১
উদ্ধার পর্ব্ব—চতুর্দ্দশ প্রবাহ

নামদার! একটু অপেক্ষা করুন, ঐ দেখুন ওত্‌বে অলীদের সেই নির্দ্দিষ্ট বিশ্বাসী কাসেদ অশ্বারোহণে মহাবেগে আসিতেছে; ঐ দেখুন আসিয়া উপস্থিত হইল—একটু অপেক্ষা করুন। যদি হানিফার জীবন শেষ হইয়া থাকে, তবে সে সংবাদ জয়নালকে শুনাইয়া কার্য্য শেষ করুন। শত্রুর শেষ, কার্য্যের শেষ—সকল শেষ একেবারে হইয়া যাউক। বাদশাহ্-নামদার। একটু অপেক্ষা করুন।”

 এজিদের হস্ত নীচে নামিল। কাসেদ কি সংবাদ লইয়া আসিল শুনিতে তিনি এখন মহাব্যগ্র, তাই অতি অল্প সময়ের জন্য জয়নাল-বধে ক্ষান্ত দিলেন—কাসেদের প্রতি এখন তাঁহার লক্ষ্য।

 কাসেদ অভিবাদন করিয়া ওত্‌বে অলীদের লিখিত পত্র মারওয়ানের হস্তে দিয়া মলিন মুখে করজোড়ে দণ্ডায়মান হইয়া রহিল। মারওয়ান উচ্চৈঃস্বরে পত্র পাঠ করিতে লাগিল:—

 “মহারাজাধিরাজ এজিদ বাদশাহ্-নামদারের সর্ব্বপ্রকারে জয় ও মঙ্গল। আজ্ঞাবহ কিঙ্করের নিবেদন এই যে, মোহাম্মদ হানিফা চতুর্দ্দশ সহস্র সৈন্যসহ মদিনার নিকটবর্ত্তী প্রান্তরে আসিয়া যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। এ পর্য্যন্ত তিনি নগরে প্রবেশ করিতে পারেন নাই। প্রথম দিনের যুদ্ধে আমার সহস্রাধিক সেনা মানবলীলা সম্বরণ করিয়াছে। আগামী কল্য যে কি ঘটিবে, তাহা কে বলিতে পারে? যত শীঘ্ন হয়, মারওয়ানকে অধিক পরিমাণে সৈন্যসহ আমার সাহায্যে প্রেরণ করুন। হানিফাকে বন্দী করা দূরে থাকুক, মারওয়ান না আসিলে চিরদাস অলীদ বোধ হয় আর দামেস্কের মুখ দেখিতে পাইবে না।”

 এজিদ একটু চিন্তা করিয়া বলিলেন, “কি বিপদ! এ অপদ কোথায় ছিল? এক দিনের যুদ্ধে হাজার সৈন্যের অধিক মারা পড়িয়াছে, এ কি কথা!”

 মারওয়ান বলিল, “বাদশাহ্-নামদার। এ সময়ে একটু বিবেচনার আবশ্যক। বন্দীর প্রাণ বিনাশ করিতে কতক্ষণ?”

 “না—না, ও-সকল কথা কথাই নহে। জয়নালকে আর মরজগতে