পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৩
উদ্ধার পর্ব্ব—চতুর্দ্দশ প্রবাহ

দলে ক্রমে ক্রমে মিশিতে লাগিল। দলের অধিনায়ক যেমনি রূপবান্, তেমনি বলবান্। পলায়িত সৈন্যগণের মুখে কি কথা শুনিয়া, তিনি চক্ষের পলকে সৈন্যগণসহ আমাদের সেনাপতি মহাশয়কে তাঁহার অশ্বারোহী সৈন্য দ্বারা ঘিরিয়া, শৃগাল-কুকুরের ন্যায় একে একে বিনাশ করিতে লাগিলেন। সেনাপতি মহাশয়ের সৈন্যগণ যেন মহামন্ত্রে মোহিত—যেন মায়াপ্রভাবে আত্মবিস্মৃত! শত্রুর তরবারি-তেজে তাহাদের প্রাণ যাইতেছে; দ্বিখণ্ডিত হইয়া তাহারা ভূতলে পড়িতেছে—এমন আশ্চর্য্য মোহ, কাহারও মুখে কথাটি নাই! কার যুদ্ধ কে করে? পলাইয়া যে, প্রাণরক্ষা করিবে, সে ক্ষমতা কাহারও দেখিলাম। মহারাজ! দেখিবার মধ্যে দেখিলাম—দামেস্ক-সৈন্যমধ্যে যাহারা জীবিত ছিল, হানিফার নাম করিয়া তাহারা ঐ মহাবীরের সম্মুখে সমুদয় অস্ত্র রাখিয়া নত শিরে দণ্ডায়মান। সেই দৃশ্য চক্ষু হইতে সরিতে না সরিতে আবার নূতন দৃশ্য!—কয়েকজন ভিন্ন দেশীয় সৈন্য আমাদের সেনাপতি মহাশয়কে বন্দী অবস্থায় সেই বীরকেশরীর সম্মুখে আনিয়া উপস্থিত করিল; এবং তিনি সেনাপতি বাহাদুরকে ঐ বন্ধনদশায় মদিনাভিমুখে লইয়া গেলেন।”

 এজিদ হাতের অস্ত্র ফেলিয়া বলিলেন, “সীমার বন্দী!”

 মারওয়ান ক্ষণকাল আধোবদনে থাকিয়া বলিল, “মহারাজ! আমি বারবার বলিতেছি, সময় অতি সঙ্কটপূর্ণ! চারিদিকে বিপদ! যে আগুন জুলিয়া উঠিল, ইহা নির্ব্বাপিত করিয়া রক্ষা পাওয়া সহজ নহে।”

 এজিদ বলিলেন, “জয়নাল! যাও, কয়েক দিনের জন্য জগতের মুখ দেখ! মারওয়ানের কথায় আরও কয়েক দিন বন্দীগৃহে বাস কর।”

 জয়নাল আবেদীন বলিলেন, “ঈশ্বর রক্ষা না করিলে তোমার কি সাধ্য? মারওয়ানেরই বা কি ক্ষমতা? আমি বলি—তুমি যাও। আজ হইতে তুমিও তোমার প্রাণের চিন্তা করিতে ভুলিও না! তোমার সময় অতি নিকট। আমি কিছু দিন জগতের মুখ দেখিব, কি তুমি কিছু দিন দেখিবে— ইহাতে নিশ্চয়তা কি?”

 এজিদ মহারোষে জয়নাল আবেদীনকে লক্ষ্য করিতে করিতে চলিয়া গেলেন। বন্দীগৃহে বন্দী আনীত হইলেন।