পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩২৬

 মোহাম্মদ হানিফা বলিলেন, “বহু অশ্বারোহী সৈন্য বটে, পদাতিক সৈন্যও আছে। উহারা যেরূপ বীরদর্পে আসিতেছে, শত্রু-সেনা হইলে মহা বিপদ,—তাহাতে আর সন্দেহ নাই। কিন্তু সন্দেহ অনেক!—বাজনাই কি নিশ্চয়তার একমাত্র প্রমাণ? অথবা ওত্‌বে অলীদ কি এমনই অবোধ যে, না জানিয়া,— আপন-পর না ভাবিয়া আনন্দবাজনা বাজাইতেছে?—ইহারা কি নিশ্চয় দামেস্কের সৈন্য?”

 আগন্তুক সৈন্যদল ক্রমেই নিকটে আসিতে লাগিল। অলীদের মনে ধ্রুব বিশ্বাস যে, দামেস্ক হইতে মারওয়ান তাহার সাহায্যে আসিতেছে।

 অলীদ সদর্পে বলিতে লাগিল, “বন্দী। বন্দী!! মোহাম্মদ হানিফা আজ সৈন্যসহ নিশ্চয়ই বন্দী! আর কি সন্দেহ আছে? আমারই নির্ব্বাচিত চিহ্ন-সংযুক্ত নূতন সাজ! উহারা দামেস্কের সৈন্য না হইয়া যায় না। বাজাও ভঙ্কা। বাজাও ভেরী! কিসের ভয়? সহস্র হানিফা আসিলেও আজ তাদের অলীদ-হস্তে নিশ্চিত পরাজয়—সম্মুখে অস্ত্র, পশ্চাতে অস্ত্র, ইহাতে কি আর রক্ষা আছে? কার সাধ্য? জগতে এমন কোন বীর নাই যে, সম্মুখ পশ্চাৎ উভয় দিক রক্ষা করিয়া সমানভাবে শত্রু সম্মুখীন হইতে পারে।”

 মনের উল্লাসে অলীদ উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিল,—“মোহাম্মদ হানিফা, তুমি কোথায়? তোমার চক্ষু কোন্ দিকে? তুমি কায়মনে যে ঈশ্বরে নির্ভর করিয়া যুদ্ধে অগ্রসর হইয়াছ, সেই ঈশ্বরের দোহাই,—একবার পশ্চাৎ দিকে চাহিয়া দেখ। এখনও অলীদের সম্মুখে অস্ত্র রাখিলে না—এখনও যুদ্ধে বিরত হইলে না? একবার পশ্চাতে চাহিয়া দেখ, তোমার জীবন-প্রদীপ এখনই নির্ব্বাপিত হইবে। তোমার বুদ্ধিমান মন্ত্রী গাজী রহ্‌মানের জীবন এখনই শেষ হইবে। সম্মুখে অলীদ, পশ্চাতে মারওয়ান, এখনও যুদ্ধ? রাখ তরবারী—কর পরজয় স্বীকার—মঙ্গল হইবে!—ক্ষান্ত হও,—ক্ষান্ত হও; আত্মসমর্পণের এই-ই উপযুক্ত সময়। বীরের মান বীরই রক্ষা করিয়া থাকে। আমি দিব্যচক্ষে দেখিতেছি, তোমাদের সকলের পরমায়ু শেষ হইয়াছে, আর অধিক বিলম্ব নাই। আবার বলি, পশ্চাতে চাহিয়া দেখ,—মহারাজ এজিদের কারুকার্য্যখচিত উড্ডীয়মান নিশানের প্রতি চাহিয়া দেখ।”