পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৩৩২

বলিলেন, “ভ্রাতঃ! তুমি আমার মাথার মণি, হৃদয়ের বন্ধু, প্রাণের ভাই। আইস। তোমাকে একবার আলিঙ্গন করি। তুমি সীমারকে বন্দী করিয়াছ—তোমার এ গৌরব-কীর্ত্তি অক্ষরূপে জগতে চিরকাল সমভাবে থাকিবে— তুমি বিনামূল্যে আজ হানিফাকে ক্রয় করিলে। ভ্রাতঃ! আর আমার গমনে সাধ্য নাই। সীমারের নাম শুনিয়া আমি অধীর হইয়াছি। আরবের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ মহাবীর ভ্রাতৃবরের শিরশ্ছেদ-বিবরণ শ্রবণ অবধি, সীমারকে একবার দেখিব বলিয়া মনে করিয়াছি। দেখিব তাহার দক্ষিণ হস্তে কত বল, সে খঞ্জর ধরিতে কেমন পটু! তাহাকে কয়েকটি কথা মাত্র জিজ্ঞাসা করিব। ইহা ছাড়া সীমারে আর আমার কোন সাধ নাই। সীমার সম্বন্ধে তুমি যাহা করিবে আমি তাহার সঙ্গী আছি। আর বেশী দূর যাইব না, আজ এইখানেই বিশ্রাম।

ষোড়শ প্রবাহ

 পরিণাম কাহার না আছে? নিশার অবসান, দিনের শেষ, সন্ধ্যার শেষ, পরমায়ুর শেষ, গর্ভের প্রসব, উপন্যাসের মিলন, নাটকের যবনিকাপতন অবশ্যই আছে। পুণ্যের ফল, পাপের শাস্তি—ইহাও নিশ্চিত।

 সীমার আজ বন্দী! যে সীমারের নামে হৃদয় কাঁপিয়াছে, যে সীমার জগৎ কাঁদাইয়াছে, সেই সীমার আজ বন্দী। সেই সীমারের আজ পরিণামফল—শেষ দশা! মোহাম্মদ হানিফা, মস্‌হাব কাক্কা, গাজী রহ্‌মান এবং প্রধান প্রধান সেনাপতিদিগের মত হইল যে, সীমারকে কিছুতেই ইহজগতে রাখা বিধেয় নহে। এমন নিষ্ঠুর, অর্থ-পিশাচ পাপাত্মার মুখ আর চক্ষে দেখা উচিত নহে। তবে কি কর্ত্তব্য?—যমালয়ে প্রেরণ। কি প্রকারে এখনও তাহা সাব্যস্ত হয় নাই।

 অলীদকে ধৃত করিয়া মোহাম্মদ হানিফা কেন ছাড়িয়া দিলেন?— তিনিই জানেন! মোহাম্মদ হানিফা মদিনার প্রবেশ-পথে নির্ব্বিঘ্নে