রহিয়াছেন, সীমারের শাস্তিবিধান করিয়া অদ্যই মদিনায় যাইবেন—এই কথাই প্রকাশ পাইয়াছে।
অলীদের যুদ্ধের আর সাধ নাই—হানিফার মদিনা-গমনে বাধা দিবার আর শক্তিও নাই, মোহাম্মদ হানিফা যখন তাহাকে ধরিয়া ছাড়িয়া দিয়াছেন, তখন এক প্রকার প্রাণের ভয়ও নাই,—কিন্তু আশঙ্কা আছে। মস্হাব কাক্কার কথা মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে তাহার অন্তরে জাগিতেছে। কি লজ্জা! অধীনস্থ যে সৈন্যগণ জীবিত আছে, তাহারাই বা মনে মনে কি বলিতেছে। আর এক কথা—সে কথা সে কাহাকেও বলে নাই—মনে মনেই চিন্তা করিতেছে, মনে মনেই দুঃখভোগ করিতেছে: দামেস্কের বহুতর সৈন্য মস্হাব কাক্কার সঙ্গী হইয়াছে, ইহার কারণ কি? কেন তাহারা কাক্কার অধীনতা স্বীকার করিল—ইহার কি কোন কারণ আছে? এই সকল ভাবিয়া অলীদ দামেস্কে না যাইয়া ভগ্নহৃদয়ে ভগ্ন-শিবিরে হানিফার মদিনা-প্রবেশকাল পর্য্যন্ত ঐ স্থানে থাকাই স্থির করিয়াছে।
অসময়ে হানিফার শিবিরে আনন্দের বাজনা। আজ আবার বাজনা কেন? অলীদ ভাবিল ও আবার কি যুদ্ধ? আবার কি মস্হাব কাক্কা রণক্ষেত্রে? মনোযোগের সহিত সে দেখিতে লাগিল, আবার সেই দূরদর্শন যন্ত্রের সাহায্য গ্রহণ করিল, দেখিল-যুদ্ধসাজ নহে। মস্হাব কাক্কা, মোহাম্মদ হানিফা প্রভৃতি বীরগণ ধনুর্ব্বাণ-হস্তে শিবিরের পশ্চাদ্ভাগ হইতে বহির্গত হইলেন এবং হস্তপদ বন্ধন অবস্থায় একজন বন্দীকে কয়েকজন সৈন্য ধরাররি করিয়া আনিল। পরে উভয় শিবিরের মধ্যবর্ত্তী স্থানে এক লৌহদণ্ডের সহিত তাহার বক্ষঃ বাঁধিয়া দুই দিকে অপর দুই দণ্ডের সহিত তাহাকে কঠিনরূপে বাঁধিয়া তাহার পদদ্বয় ঐ হস্তাবদ্ধ দণ্ডের নিম্নভাগে আঁটিয়া বঁধিয়া দিল।
অলীদ মনে মনে ভাবিতেছে, এ আবার কি কাণ্ড উপস্থিত? এমন নিষ্ঠুরভাবে ইহাকে বাঁধিয়া তীরধনু-হস্তে সকলে অর্ধচন্দ্রাকৃতিভাবে কেন ঘিরিয়া দাঁড়াইল? এ লোকটি এমন কি গুরুতর অপরাধ করিয়াছে? ইহার প্রতি এরূপ নির্দ্দয় ব্যবহার করিতেছে কেন? একটু অগ্রসর হইয়া দেখি—কার এই দুর্দ্দশা?—কোন্ হতভাগার পাপের ফল?