পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৩৫
উদ্ধার পর্ব্ব—ষোড়শ প্রবাহ

জানি। তােমার পাপভার—সে পাপভার, হায়! হায়! তুমি যাহার বুকের উপর উঠিয়া খঞ্জর দ্বারা গলা কাটিয়াছিলে, তিনিই লইয়াছেন। কিন্তু সীমার! জগতে দৈহিক যাতনার দায় হইতে উদ্ধার করিতে তােমার মুখপানে চায় এমন লােক কৈ? ঈশ্বরের লীলা দেখ, তোমারই অনুগত সৈন্য তােমারই হস্তপদ বন্ধন করিয়া আমার সম্মুখে আনিয়া দিল। ইহাতেও কি তুমি সেই অদ্বিতীয় ভগবানের প্রতি ভক্তি সহকারে বিশ্বাস করিবে না? এখনও কি তােমার পূর্ব্বভাব অন্তর হইতে অন্তর্হিত হয় নাই। এই আসন্নকালে একবার ঈশ্বরের নাম কর। সীমার! আমরা তােমার সমুচিত শাস্তিবিধান করিব বলিয়া আজ তীরহস্তে দণ্ডায়মান হইয়াছি। তােমায় তরবারি আঘাত করিলাম না, বর্শা দ্বারা ভেদ করিলাম না; এই বিষাক্ত তীরে তােমার শরীর জর্জ্জরিত করিয়া তােমাকে ইহজগৎ হইতে দূর করিব। ঐ দেখ, তােমার প্রিয়বন্ধু ওত্‌বে অলীদ ছল-ছল নয়নে তােমার দিকে চাহিয়া আছে মাত্র। কে আজ তােমার সাহায্য করিতে আসিল? তােমার নীরব রােদন কে কর্ণপাত করিল? তুমি যাহা নিতান্ত অনুগত, তােমার আজিকার দশা তাহার নিকট প্রকাশ করিতে, আজিকার এ অভিনয়ের অভাবনীয় দৃশ্য রাজার গােচর করিতে—অনেক চক্ষু তােমার দিকে রহিয়াছে, দেখিতেছি। কিন্তু কেহই তােমার কিছু করিল না। কি আশ্চর্য্য, তাহাদের অস্ত্রের অভাব নাই, সাহসের অভাব ঘটিয়াছে কিনা জানি না;—কৈ, তাহারা কি করিল। জগতে কেহ কাহারও নহে! সকলেই স্বার্থের দাস, লােভের কিঙ্কর। তোমায় সঞ্চিত অর্থ আজ কোথায় রহিল? সেই পুরস্কারের লক্ষ টাকায় কি উপকার হইল? ঈশ্বর-কৃপায় তুমি আজ আমাদের ক্রীড়ার সামগ্রী। ধনুর্ব্বাণ সহ তােমাকে লইয়া আজ ক্রীড়া করিব। সীমার! কৃতকার্য্যের ফল সামান্যরূপে আজ আমাদের হস্তে ভােগ কর। এই আমার কথার শেষ—প্রথম বাণ-নিক্ষেপ! দেখ বাণের আঘাত কত মিষ্ট বােধ হয়!—কেমন সুখসেব্য নিদ্রা আইসে!”

 ধনুর টঙ্কার সীমারের কর্ণে বজ্রধ্বনির ন্যায় বােধ হইতে লাগিল।